সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিক: একটা যুগাবসান বলাই যায়। মঙ্গলবার পিয়ারলেস হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করলেন শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী উস্তাদ রাশিদ খান। বুধবার রবীন্দ্রসদনে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদরা, শিল্পীরা। তারপর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুটে তাকে বিদায় জানাল রাজ্য। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তার মরদেহ নিয়ে উত্তর প্রদেশের বঁদায়ুতে রওনা হল পরিবার সেখানেই শেষ কৃত্য সম্পন্ন হবে তার। শেষ মুহূর্তের রাস্তাটা ভিজে রইল তার অনুরাগীদের চোখের জলে।
প্রায় দেড় মাস ধরে তিনি লড়ছিলেন। ক্যানসার তো ছিলই তার ওপত আচমকা ব্রেন স্ট্রোক যেন সেই লড়াইকে আরও খানিক কঠিন করে দিয়েছিল। তবে ডিসেম্বরের শেষ দিকে কিছুটা সাড়া দিয়েছিলেন চিকিৎসায়। তবে মঙ্গলবার আচমকা অবস্থার অবনতি ঘটে। পরিস্থিতি এমন হয় যে তাকে দিতে হয় ভেন্টিলেশনে। প্রতিটা মুহুর্ত কঠিন হয়ে উঠেছিল। অবশেষে ৩.৪৫ নাগাদ লড়াই শেষ। জীবনের পপরিসমাপ্তি ঘটল রাশিদ খানের।
জয়নগরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটে গিয়েছিলেন পিয়ারলেসে। পরিবার চিকিৎসককে পাশে নিয়েই ঘোষণা করেন সেই চরম দু:সংবাদ আর তারপরই ভিড় জমল হাসপাতালে। সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পী মহল সকলেই শোকস্তব্ধ।
বুধবার তাকে নিয়ে আসা হয় রবীন্দ্রসদনে। রাজনীতির রঙ ভুলে সবাই দেখতে এলেন তাকে। কে নেই সেই তালিকায়! জিতেন্দ্র তিওয়ারি থেকে কৌস্তভ বাগচী, শতরুপ ঘোষ থেকে দেবাশীষ কুমার, মুনমুন সেন থেকে রেডিও মির্চির আরজে লাজবন্তী। ফুলের মালা চোখের জল, আর তারই গাওয়া গান- বুধবার রবীন্দ্রসদন লেখা হল রাশিদ খানের নামেই।
এরপর গান স্যালুট। ভেঙে পড়ল তার পরিবার। রোদের আপাত তীব্রতা থাকলেও শোকের আবহে পরিবেশ হিমশীতল। তোপধ্বনিতে বিদায় হল রাশিদের, শেষ ঠিকানা উত্তরপ্রদেশ।কলকাতা তার প্রাণের প্রিয় শহর। দেশ-বিদেশ ঘুরেও বাংলাকেই আঁকড়ে ধরে রাখতেন উস্তাদ রাশিদ খান। তাই বাংলার প্রিয় শিল্পীর প্রয়াণে গতকাল থেকেই এ শহর থমথমে। উত্তরপ্রদেশে বদায়ুঁতে জন্ম উস্তাদ রাশিদ খানের। রাশিদ খানের ঘরানা ছিল রামপুর-সাসওয়ান। তাই জন্মভিটেতেই সমাধিস্থ করা হবে তাকে।
রাশিদ চলে গেলেন, পড়ে রইল তার যাবতীয় সৃষ্টি। কোনও হেডফোনে যখন ফের বেজে উঠবে আওগে যব তুম সাজনা, মনে পড়বে একজন মানুষ ছিলেন— যিনি গান দিয়ে ম্যাজিক তৈরি করতে জানতেন।