সাংবাদিক – রাকেশ নস্কর ঃ সুন্দরী গাছের ভীড়, মেঠো পথ ও জলের স্রোতে নৌকোর আনাগোনা। যেখানে কপাল জোরে মাঝে মধ্যেই বাঘ, কুমীরের দেখাও মিলে যায়। যেখানের মধু সারা দেশে সুপরিচিত। তবে যে সুন্দরবনের অরণ্যকে বার বার সিনেমা, ওয়েব সিরিজে দেখানো হয়েছে সেই সুন্দরবনে ধারাবাহিকের আনন্দ টেলিভিশনের মাধ্যমে পৌঁছলেও, সিনেমার সঙ্গে সেই অর্থে পরিচয় নেই সেখানকার সাদামাঠা মানুষজনেদের। যেখানে নেই কোনও সিনেমা হল, সেখানে মানুষকে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখতে হলে যেতে হয় ক্যানিং, যা অন্তত ৬৭ কিলোমিটারেরও অধিক দুরত্বে অবস্থিত। সেই সুন্দরবনের দুয়ারে পাড়ি দিয়েছিল এক ঝাঁক সিনেমাওয়ালার দল। যেখানকার প্রত্যন্ত গ্রামে সিনেমার ভাবনা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল বনবিবি ছবির প্রধান কলাকুশলীরা। বনবিবি ছবির স্ক্রিনিং হল সুন্দরবনের মাটিতে যেখানে প্রোজেক্টারের মাধ্যমে পর্দা টাঙিয়ে সেখানেরই এক স্কুল মাঠে আয়োজন করা হয় স্ক্রিনিং-এর।
ছবির কলাকুশলীরাও গ্রামের মানুষদের সঙ্গে উপভোগ করলেন সিনেমার প্রদর্শনী।এই ছবির মুখ্য চরিত্র পার্নো মিত্র, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, আর্য দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে পরিচালক রাজদীপ ঘোষ, প্রযোজক রানা সরকার সবাই সামিল ছিলেন দুয়ারে সিনেমার সফরে। সিনেমার প্রদর্শনী নিয়ে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাসও ছিল দেখার মতো। স্থানীয় স্কুলের হেডমাস্টার মশাইয়ের সমর্থনে এই উদ্যোগ সফল হয়।
দুয়ারে সিনেমার সফরের মাঝে খোস মেজাজে পাওয়া গেল পার্নোকেও, ক্যামেরার সামনে সাবলীল ভাবেই পোজ দিলেন, রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে গলা ভিজিয়ে নিলেন ডাবের জলে। অন্যদিকে পাখিরালয় যাওয়ার পথে সুন্দরবনে শ্যুটিংয়ের সেই সব অভিজ্ঞতার গল্প শোনালেন অভিনেত্রী। পার্নোর কথায়, “এটা সুন্দরবনের পরিবেশ নিয়েই গল্প, যাদের নিয়ে সিনেমা তাঁদের ছবিটি দেখানোর জন্য অভিনব প্রচেষ্টা ছিল। এখানে সিনেমা দেখার সুযোগ নেই ফোন হয়তো সবার হাতে চলে এসেছে কিন্তু সিনেমা হল এখানে নেই”।
অপরদিকে বর্তমান সময়ে বলিউড থেকে বাংলা দুই দিকেই দাপিয়ে অভিনয় করছেন অভিনেতা দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য। বনবিবি ছবিতে তাঁর দাপুটে চরিত্রের বিষয় আলোকপাত করলেন অভিনেতা। দিবেন্দ্যু ভট্টাচার্যের কথায়, “এখানকার গ্রামের মানুষদের সঙ্গে সিনেমা দেখলাম। ভালো লাগার মত অভিজ্ঞতা। সুন্দরবনে জীবনে আমার ঘুরতে আসা হয়নি। বনবিবি ছবি করতে গিয়ে যখন সুন্দরবনে শ্যুটিং হবে জানলাম, তখন এক পায়ে রাজি হয়ে গেয়েছিলাম”।
কখনও সুন্দরবনের মাটিতে লুটোপাটি খেয়েছেন আবার কখনও বাজনা বাজিয়েছেন চরিত্রের স্বার্থে অভিনেতা আর্য দাশগুপ্ত। এরপর জেনে নেওয়া গেল কেমন ছিল অভিনেতা আর্য দাশগুপ্তর পথ চলা। সফরের মাঝে আর্য দাশগুপ্ত জানালেন, “উচ্ছ্বাস এই ভেবে যে সুন্দরবনের মানুষের কাছে এই সিনেমাটা আনতে পারলাম। বাড়ির কাজ ফেলে এখানকার মানুষেরা দূরে গিয়ে ক্যানিংয়ে সিনেমা দেখতে যেতে পারেন না। এই প্রচেষ্টা এর আগে কেউ করেনি। ভাগ্যবান যে এই সিনেমার একজন সদস্য হতে পেরেছি”।
সুন্দরবনের প্রক্ষাপটে ছবি তৈরির ক্ষেত্রে সুন্দরবনের পরিবেশ কতটা প্রয়োজনীয় ছিল সেই কথা জানালেন পরিচালক রাজদীপ ঘোষ। তিনি জানান, যে জায়গায় যে মানুষদের নিয়ে সিনেমা বানিয়েছি তাঁদের সিনেমা দেখতে গেলে বহু দূর গিয়ে সিনেমা দেখতে হয়, সারাদিনপরিশ্রম করে কারও ভালো লাগে না দূরে গিয়ে সিনেমা দেখতে তাই আমাদেরকেই আসতে হবে”।
প্রযোজক রানা সরকার দুয়ারে সিনেমার উদ্যোগের বিষয় জানালেন, “কলকাতার মানুষদের ১০ কিলোমটারও যেতে হয় না সিনেমা দেখার জন্য কিন্তু এখানে অনেক দূরে যেতে হয়, আগামী দিনেও দুয়ারে সিনেমার ভাবনা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে”।
সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের কঠিন লড়াইয়ের বাস্তব চিত্ররূপ ছবি বনবিবি। সেই কথা মাথায় রেখেই প্রথমে সুন্দরবনের মানুষদেরকেই এই ছবিটি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে উপহার দিল টিম “বনবিবি”।