মাম্পি রায়, সাংবাদিকঃ রথযাত্রার সঙ্গে সঙ্গেই দুর্গাপুজোর বাদ্যি বেজে গেল। আর ৩মাস পরই শারদোত্সবে মেতে উঠবে আপামর বাঙালি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রথযাত্রার আয়োজন হয়ে থাকে। তবে মূলত ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে এই উত্সব সবচেয়ে বড় করে উদযাপন করা হয়। ধুমধাম করে রথযাত্রা পালিত হয় পুরী, মাহেশ ও ইসকনের মন্দিরে। পুরীর রথে জগন্নাথ মহাপ্রভুর দর্শন করা খুবই শুভ বলে বিবেচিত হয়। রথ দেখার জন্য প্রত্যেক বছর অসংখ্য পুণ্যার্থী ভিড় জমান পুরীতে। কথিত আছে, রথযাত্রায় পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অংশ নিলে জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হওয়া যায়। কথিত আছে, ভক্তের আর্তিতে সাড়া দেন স্বয়ং জগন্নাথ। ভক্তের দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটান তিনি। এছাড়া রথের রশিতে টান দিলে সবধরনের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে এই রথযাত্রা শুরু হয়। এই উৎসবের সময় ভগবান জগন্নাথ, বোন সুভদ্রা ও ভাই বলভদ্র তিনটি রথে চড়ে মাসির বাড়িতে যান।
স্নানযাত্রার দিন পুরীতে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাদেবীকে ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করানো হয়। কথিত আছে এরপরই তাঁদের জ্বর আসে। নির্জনে তাঁর চিকিৎসার জন্য ১৫ দিন বন্ধ থাকে গর্ভগৃহ। ১৫ দিন পর পালিত হয় নবযৌবন উৎসব। তারপরদিন রথে চড়ে মাসির বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা।
পুরীর রথযাত্রায় ভগবান জগন্নাথের রথে থাকে ১৬টি চাকা, বলভদ্রের রথে ১৪টি চাকা ও সুভদ্রার রথে থাকে ১২টি চাকা। হলুদ, সবুজ ও নীল রঙে এই ৩টি রথ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই। নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয় রথেক কাঠামো। জগন্নাথ দেবের রথের নাম নন্দীঘোষ। বলরামদেবের রথের নাম তালধ্বজ। শুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। জগন্নাথদেবের নন্দীঘোষ রথের ঘোড়াদের নাম শঙ্খ, বলহকা, হরিদাশ্ব, শ্বেতা। বলরাম দেবের রথ তালধ্বজের ঘোড়াদের নাম, তীব্র, ঘোড়া, দীর্ঘশর্মা, স্বর্ণনাভ। সুভদ্রাদেবীর রথ দর্পদলনের ঘোড়াদের নাম রচিকা, মোচিকা, জিতা এবং অপরাজিতা।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, বোন সুভদ্রা তার ভাই কৃষ্ণ এবং বলরামের কাছে শহর দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তারপর দুই ভাই তাদের বোন সুভদ্রার জন্য বিশাল রথ প্রস্তুত করেন। তাতে চড়েই নগরভ্রমণে বেরোন তিনজন। পথে, তিনজনই গুন্ডিচায় তাদের মাসির বাড়িতে যান। সেখানে ৭ দিন থেকে শহর ভ্রমণ শেষ করে পুরীতে ফিরে যান তাঁরা। তারপর থেকেই, প্রতি বছর তিন ভাই-বোন রথে বসিয়ে শহর ভ্রমণ করানো হয়। মাসির বাড়ি, গুন্ডিচা মন্দিরে রাখা হয় রথ।
পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, পুরীর রথযাত্রা দেখলে এক হাজার যজ্ঞের সমান পুণ্য অর্জন করা যায়। যখন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথ যাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়, তখন পালকি করে পৌঁছন পুরীর রাজা গজপতি। সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথ মণ্ডপ ও রথযাত্রার পথ পরিষ্কার করেন তিনি। তারপরই শুরু হয় রথযাত্রা।
আরও পড়ুন : ৪৩-এ ক্যাপ্টেন কুল, ধোনির পা ছুঁলেন সাক্ষী