সিকিউরিটি ফোর্স এবং ইমিগ্রেশন ব্যুরোর ততপরতায় বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে প্রবেশ করছেন বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় পড়ুয়ারা, ফেরান হচ্ছে নেপালি পড়ুয়াদেরও
সহেলী দত্ত, প্রতিনিধি : দেশ জুড়ে জারি কার্ফু। ছাত্র আন্দোলনের জেরে উত্তাল গোটা বাংলাদেশ। সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১০৫। এরই মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে দলে দলে ভারতে ফিরে আসছেন বাংলাদেশে পাঠরত পড়ুয়ারা। ত্রিপুরা, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ভারতে ঢুকছেন তাঁরা। শুক্রবার রাত থেকে বাংলাদেশ জুড়ে কার্ফু জারি করেছে শেখ হাসিনা সরকার। বিক্ষোভ পরিস্থিতি সামাল দিতে নামান হয়েছে ব়্যাফ। সেনাবাহিনীর সুরক্ষার জন্য উড়েছে কপ্টারও। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলিতে সবসময় চলছে কেন্দ্রীয়বাহিনীর টহলদারি। বাংলাদেশের পড়ুয়া তথা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আধাসামরিক বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কলেজগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার, ভারতের বিদেশমন্ত্রক বাংলাদেশের এই উত্তাল পরিস্থিতিকে দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অর্থাত বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির বিষয়ে কোনওরকম হস্তক্ষেপ করবে না ভারত, তা আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে ভারত সরকার। তবে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়দের নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর রাখার আশ্বাসও দিয়েছেন তাঁরা। ভারতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৮,৫০০ জন পড়ুয়া এবং বসবাসকারীর সংখ্যা প্রায় ১৫০০০ জন। এমইএ-এর মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন সজাগ। ভারতে ফিরে যেতে ইচ্ছুকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে কমিশন। সূত্রের খবর, ১৩ জন নেপালি পড়ুয়াকেও তাঁদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে ভারতীয় হাই কমিশন। পড়ুয়াদের সুস্থভাবে দেশে ফেরান ছাড়াও, তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এবং ইমিগ্রেশন ব্যুরো একসঙ্গে কাজ করছে। বেনাপোল-পেট্রাপোল, গেদে-দর্শনা এবং আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে পড়ুয়ারা যাতে নিরাপদে দেশে ঢুকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জাতিপুঞ্জ থেকে শেখ হাসিনাকে ছাত্রদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে গত সোমবার থেকে ছাত্র আন্দোলনের জেরে উত্তাল পরিস্থিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ছয় জনের। সংঘর্ষে কাঁদানে গ্যাস, বোমা, ইটবৃষ্টি করা হয় দু পক্ষ থেকেই। আন্দোলনের দিন গড়াতেই কার্ফুর পাশাপাশি গোটা দেশে বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। পরিস্থিতি সামাল দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের তরফে।
তবে ভারতে ফেরা ছাত্ররা জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন বোঝার বাইরে। প্রথমে আন্দোলনের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও, তাঁরা সেখানে অপেক্ষা করেছিল পরিস্থিত স্বাভাবিক হওয়ার। কিন্তু পরিস্থিতি বেসামাল হওয়ায় তাঁরা দেশে ফেরার জন্য তোড়জোড় শুরু করে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও পারছিলেন না তাঁরা। অবশেষে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরেন তাঁরা। বাংলাদেশে যেহেতু ট্রেন, মেট্রো পরিষেবা বন্ধ। এমনকি ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী ট্রেনটির পথ অবরোধ করা হয়েছে। তাই শেষপর্যন্ত সড়কপথে গাড়ি করে সীমান্ত পেরিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন : মনোজের ইস্তফা নিয়ে বাড়ছে জল্পনা