সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- “আমার না হলে কারও হতে দেব না”- সুইসাইড নোটে উল্লেখ রাকেশ শার। লেক গার্ডেন্স থানা এলাকার নিউ মেট্রো গেস্ট হাউসে বুধবার বিকেলে বান্ধবীকে গুলি করে খুন করার চেষ্টা করে দীর্ঘদিনের প্রেমিক রাকেশ শা। প্রেমিকা নিক্কু কুমারী দুবে প্রাণ বাঁচিয়ে পালাতে গেলে তাঁর কিডনির কাছে গেঁথে যায় 9mm পিস্তলের বুলেট। সেই অবস্থায় দৌড়ে গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকারকে জানায়, “সে বাঁচতে চায়, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হোক”। সঙ্গে সঙ্গে লেক থানাকে জানানো হলে, থানার তরফ থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। যুবতীকে যাদবপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরই মধ্যে ওই পিস্তল থেকে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হয় রাকেশ। ঘটনাস্থলে পৌছয় লেক থানার পুলিশ। পৌছয় উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাসহ গোয়েন্দা বিভাগের দল।
ঘটনাস্থল ও যুবকের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ওই গেস্ট হাউসের ৩ তলার ৩০১ নম্বর ঘর থেকে উদ্ধার হয় নাইন এমএম পিস্তল। পাওয়া যায় ৬-৭ পাতার সুইসাইড নোট। প্রেমিকাকে খুন করে আত্মহত্যার পরিকল্পনা পূর্বনির্ধারিত ছিল বলে উল্লেখ সুইসাইড নোটে। গুলি চালানোর আগে মদ্যপান করে রাকেশ। এদিন দুপুর ২ টো নাগাদ নিউ মেট্রো গেস্ট হাউসে আসে নিক্কু ও রাকেশ। বিকেল ৪.৪৫ নাগাদ নিক্কুকে গুলি চালানো হয়। ৫.১০ নাগাদ নিজেকে গুলি করে রাকেশ। এই গেস্ট হাউসে আগেও আসে এই যুগল। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নিক্কু ও রাকেশের। বিয়ের জন্য ২ জনের বাড়িতে জানানো হলে জাতিগত কারণে সমস্যা তৈরি হয়। করোনাকালে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করে নিক্কু। এরই মধ্যে পরিবারকে না জানিয়ে এলাকার যুবক ইনজামুন মোল্লা ওরফে রাহুলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় রাকেশের।
সুইসাইড নোটে এই রাহুলের নাম উল্লেখ মৃতের। রাহুলের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে রাকেশকে বিয়ে করার জন্য জোরাজুরি করছিল রাকেশ। এমনকী ২ পরিবারকে বোঝানো হবে বলেও যুবতীকে জানায় সে। আহত যুবতী কোনওভাবে মানতে রাজি না হলে শেষবারের জন্য তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলে রাকেশ বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। রাকেশ নিক্কুর সম্পর্ক নিয়ে ২ পরিবারের মধ্যে বিবাদও হয়। আগেও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে নিক্কুকে ভয় দেখানো হয়েছে বলে আরপ্লাস নিউজকে জানিয়েছে ইনজামুন মোল্লা ওরফে রাহুল। রাকেশকে ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও নিক্কুর কাছে তাঁর নাম শুনেছে বলে দাবি রাহুলের। মগরাহাটে বাড়ি রাহুলের, বজবজে রঙের কাজ করে। নিক্কুর ভাই দীনেশ রাহুলের সঙ্গে রঙের কাজ করত। সিভিল ডিফেন্সের চুক্তিভিত্তিক কর্মী রাকেশ 9mm পিস্তল পেল কোথা থেকে তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, হুগলি থেকে নিয়ে আসা হতে পারে পিস্তল। যা তৈরি হয়েছে মুঙ্গেরে। যদিও এই বিষয়টাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে সুইসাইড নোটে রাকেশের লেখা তথ্যকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে এই তথ্যে। বিগত ২ মাস ধরে রাকেশের আচরণেও অসংলগ্নতা প্রকাশ পাওয়া যাচ্ছিল বলে দাবি তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের।বৃহস্পতিবার আহত যুবতীর সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করতে যান রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজ নেন। যুবতীর অবস্থা স্থিতিশীল হলেও এখনও বিপদমুক্ত নয়। কিডনির কাছে আটকে রয়েছে বুলেট। শারীরিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় এখনও অস্ত্রোপচার করা যায়নি। ঘটনায় উভয় পরিবারের তরফ থেকে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
আরও পড়ুন : রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নাগরিক কনভেনশন। অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকেই নেওয়া হবে রাজনৈতিক মত