পৌষালী উকিল, প্রতিনিধি ঃ ফের কোপা আমেরিকা মেসির। কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতল বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্তিনা। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে খেলা গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হওয়ার ম্যাচ গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। শেষটায় লাউতারো মার্তিনেজের অবদান এনে দেয় মেসিদের জয়। এবার কলম্বিয়াকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের ১৬ বারের চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্তিনা।
কোপা আমেরিকা ফাইনালের শুরুতেই ঘটে বিলম্ব। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা যায় মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে। বিনা টিকিট মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন অসংখ্য দর্শক। চেষ্টা করেও তাঁদের রুখতে পারছিলেন না নিরাপত্তাকর্মীরা। এসবের মাঝে বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও অনেক দর্শক মাঠে ঢুকতে গিয়ে আহত হন। পরিস্থিতি সামলাতে ফাইনাল শুরুর নির্ধারিত সময় দফায় দফায় পিছোনো হয়। শেষমেষ নির্ধারিত সময়ের প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর শুরু হয় আর্জেন্তিনা-কলম্বিয়া ফাইনাল। তবে সব বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে নীল-সাদাদের ঝুলিতেই কোপা আমেরিকা।
মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামের কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচ আগাগোড়াই ছিল রোমাঞ্চে ভরা। ম্যাচ শুরু হতেই লিওনেল মেসিদের বিরুদ্ধে দাপট দেখাতে থাকেন কলম্বিয়ার ফুটবলাররা। এদিকে ম্যাচ শুরুর ৫ মিনিট পর থেকেই কলম্বিয়ার শট আটকাতে দেখা যায় নীল সাদা ফুটবলারদের। ৬ মিনিটে সুযোগ চলে আসে কলম্বিয়ার কাছে। কলম্বিয়া খেলার গতি বাড়ানোয় পাল্টা খেলার গতি কমানোর চেষ্টা করে আর্জেন্তিনা। ২০ মিনিটের মাথায় প্রথম দলগত আক্রমণ তুলে আনে আর্জেন্তিনা। বক্সে ঢুকে শট মারেন মেসি। যদিও যৌথ প্রচেষ্টায় তা আটকে দেয় ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষক। ৩০ মিনিট পর আরও সুযোগ তৈরি করে কলম্বিয়া। কিন্তু ৩৬ মিনিটের মাথায় শট মারতে গিয়ে চোট পান মেসি। পরে ফের মাঠে নামলেও খোঁড়াচ্ছিলেন তিনি। ফলে খেলার গতি কমতে থাকে আরও। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই পরিকল্পনায় খেলতে থাকে কলম্বিয়া। এবারে শুরু থেকেই গোলের জন্য ঝাঁপায় আর্জেন্তিনাও। দুতরফেই খেলার গতি বাড়ে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলম্বিয়ার ফুটবলারদের শারীরিক শক্তির কাছে একটু হলেও ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে আর্জেন্তিনা।
৬৪ মিনিটের মাথায় বড় ধাক্কা আর্জেন্তিনার। চোট পেয়ে ময়দান ছাড়েন এলএম ১০। এরপরও গাজোয়ারি ফুটবল খেলে আর্জেন্তিনার ছন্দপতন করছিল কলম্বিয়া। ৮৭ মিনিটের মাথায় ফের সুযোগ পায় আর্জেন্তিনা। এবারও আসল কাজ করতে তারা ব্যর্থ। ৯০ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্তিনা ও কলম্বিয়া দুই দলের কেউই কোনও গোল করতে পারেননি। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে প্রথমার্ধ পর্যন্ত স্কোরলাইন ছিল ০-০। এরপর ১১২ মিনিটে বদলে যায় সেই ছবি। লো সেলসোর ফ্লিক থেকে বল আসে লাউতারো মার্তিনেজের পায়ে। সেই বল জালে জড়িয়ে দিতে ভুল করেননি মার্তিনেজ। এরপর সোজা ছুটে যান সাইড লাইনের ধারে মেসির দিকে। জড়িয়ে ধরেন ফুটবলের রাজপুত্রকে। মেসির চোখের কোলে মজে যাওয়া নদী যেন ফিরে পায় প্রাণ। লাউতারোর একমাত্র গোলে আর্জেন্তিনা এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
মেসির হাসি-কান্নার সাক্ষী থাকল ফুটবলবিশ্ব। প্রথমার্ধের চোট সামলে দ্বিতীয়ার্ধে নামলেও ভাল দেখাচ্ছিল না মেসিকে। একটি স্প্রিন্ট টানতে গিয়ে পড়ে যান মেসি। ৯০ মিনিটের আগেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মেসিকে। সম্ভবত হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান এলএম ১০। নিজেই ইঙ্গিত দেন তাঁকে তুলে নেওয়ার জন্য। বরফ পায়ে বেঁধে ডাগ আউটে বসে বাঁধ ভাঙা জল গড়িয়ে আসে মেসির চোখের কোল থেকে। এরপর কোপার শেষ বেলায় আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মেসির বিষাদ নয়নে হাসি এনে দেয় দি মার্তিনেজের গোল। ১১২ মিনিটে কলম্বিয়ার জালে বল জড়িয়ে দলকে জয় এনে দেন লাউতারো মার্তিনেজ। মার্তিনেজ এবারের কোপা আমেরিকার টপ স্কোরার। এবারে ৫ টি গোল করেছেন তিনি। মেসির চোখে কান্না থেকে হাসি এনে দিয়েছিলেন ত্রাতা মার্তিনেজই। এই নিয়ে দ্বিতীয় কোপা জয় এলএম ১০-এর।
আরও পড়ুন : জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রিপোর্ট তলব বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের।