মাত্র ৪ মাসের বিবাহিত জীবন। আর ৫ জন নবদম্পতির মতই তারাও সন্তান, আগামী ৫০ বছরের প্ল্যান করেছিলেন। কে জানত পরের দিন সকালটা খুব অন্ধকার হবে। যার সঙ্গে আগের রাতে স্বপ্নের মায়াজাল বুনেছিলেন স্মৃতি সিং, পরদিন সকালে সেই স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনেছিলেন তিনি।
সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিক: সেনা অফিসারের বউ হওয়া নেহাতই কোন সোজা বিষয় নয়৷ অনেক আত্মত্যাগ অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয় সেকথাই যেন ফের প্রমাণ করলেন প্রয়াত ভারতীয় সেনার ক্যাপটেন বীর অংশুমান সিংয়ের স্ত্রী স্মৃতি। বিয়ের মাত্র ৪মাসের মধ্যেই যার জীবন থেকে মুছে গিয়েছে সব রঙ।
মাত্র ৪মাসের বিবাহিত জীবন। আর ৫জন নবদম্পতির মতই তারাও সন্তান, আগামী ৫০ বছরের প্ল্যান করেছিলেন। কে জানত পরের দিন সকালটা খুব অন্ধকার হবে। যার সঙ্গে আগের রাতে স্বপ্নের মায়াজাল বুনেছিলেন স্মৃতি সিং, পরদিন সকালে সেই স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনেছিলেন তিনি।
সিয়াচেন হিমবাহে পোস্টিং পেয়েছিলেন ভারতীয় সেনার মেডিক্যাল কোরের পঞ্জাব রেজিমেন্টের ২৬ ব্যাটেলিয়নের ক্যাপ্টেন অংশুমান সিং। পুণের আর্মড ফোর্সের মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমএমবিএস স্তরের পড়াশোনা শেষ করে আগ্রায় ইন্টার্নশিপ করেছিলেন তিনি। প্রথম ফিল্ড পোস্টিং হিসেবে সিয়াচেনেই পাঠানো হয়েছিল তাকে। সেখানেই গত বছর জুলাইয়ে গোলাগুলি রাখার একটি জায়গায় আগুন লেগে গিয়েছিল। সেইসময় সহকর্মীদের উদ্ধার করতে গিয়ে মৃত্যু হয় ক্যাপ্টেন অংশুমানের। সেদিন নিজের জীবনের পরোয়া না করে সহকর্মীদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সহকর্মীদের বাঁচাতে পারলেও, শহিদ হন তিনি।
ক্যাপ্টেন অংশুমান সিংয়ের জীবন কাহিনী কোনও সাধারণ কাহিনি নয়। গত বছরের ১৯ জুলাই, ওই ভয়াবহ আগুন থেকে চার-পাঁচজনকে উদ্ধার করেছিলেন তিনি। তবে এরপরই আগুন পাশের মেডিকেল ইন্সপেকশন ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাপ্টেন সিং সেখানেও ছুটে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আর জীবনে ফেরা হল না, ফেরা হল স্মৃতির কাছে। স্ত্রী স্মৃতির কাছে আজীবন স্মৃতি হয়ে গেলেন অংশুমান।
ঘটনার ঠিক আগের দিন রাতে দুজনের কথা হয়েছিল। আগামী ৫০ বছরে তাদের জীবন কেমন হবে, নতুন বাড়ি বানানো নিয়ে, সন্তান নেওয়া নিয়ে কথা বলেন তারা। তার পরের দিন সকালেই সেনার পক্ষ থেকে একটা ফোন এসেছিল স্মৃতির কাছে। ফোনের ওই প্রান্ত থেকে বলা হয়েছিল, তার স্বামী, ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেন আংশুমান সিং আর নেই। বিশ্বাস করেননি, করতে পারেননি। এই তো সবে একসাথে পথ চলা শুরু হল। এখনই রাস্তা শেষ হয়ে গেল!
চলতি বছর ৬ জুন অংশুমানকে মরনোত্তর কীর্তি চক্র পুরস্কারে ভূষিত করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ক্যাপ্টেন অংশুমান সিংয়ের হয়ে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন তার বিধবা স্ত্রী স্মৃতি সিং। পরনে সাদা শাড়ি, মুখে একরাশ অভিমান জীবনজুড়ে শুন্যতা। পুরস্কার নিয়ে স্মৃতি জানালেন অংশুমান চাইতেন মৃত্যুর সময় তার বুকে পিতলের মেডেল থাকবে। কার্যক্ষেত্রেও হয়েছে তাই।
আক্ষরিক অর্থেই লাভ এট ফার্স্ট সাইট হয়েছিল তাঁদের। কলেজের প্রথম দিনই তাদের দেখা হয়েছিল। প্রেম উকি দিয়েছিল সেদিনই। এর এক মাস পরই আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে সুযোগ পান অংশুমান। তারপর থেকে, দীর্ঘ আট বছর ধরে দূরে দূরে থেকেই তারা প্রেম করে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
বরাবরই লং ডিসট্যান্স রিলেশন ছিল তাদের। স্মৃতি তা মেনেও নিয়েছিলেন। কিন্তু জীবন মৃত্যুর মাঝের এই দূরত্ব? তা পেরিয়ে যাওয়ার উপায় আর নেই।
আরও পড়ুন : ৪ রাশিতে হনুমানজির কৃপা