ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়,সাংবাদিক: নির্যাতিতার মা-বাবার আইনজীবী এদিন বলেন, হাসপাতাল থেকে দুটি ফোন কল এসেছিল তাদের কাছে। প্রথম ফোন করে বলা হয় মে অসুস্থ তাড়াতাড়ি চলে আসুন। দ্বিতীয় ফোন কলে বলা হয় মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। হাসপাতালে গেলে তিন ঘন্টা বসে রাখা হয় তারপর মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়।
শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবীর দাবি, কোন সময় নষ্ট না করে এখনই সিবিআইকে তদন্তভার তুলে দেওয়া হোক। ঘটনার দিন যা যা ঘটেছে একটি চার্ট আকারে হাইকোর্টে জমা দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও তিনি বলেন আরজিকর কলেজের প্রিন্সিপাল পদত্যাগ করবার চার ঘন্টার মধ্যে তাকে পাশের একটি মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এত বড় ঘটনার পরও তাকে কি করে পুরস্কার দেওয়া হলো? কেন ঘটনার পর টালা থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হল।
অন্য মামলাকারী কৌস্তব বাগচী দাবি করেন, সাত দিন সময় নষ্ট হলে তথ্যপ্রমাণ নষ্টের আশঙ্কা থেকে যাবে তাই অবিলম্বে সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন ঘটনার পর তিনি সিবিআই তদন্ত দিলে আপত্তি নেই তাহলে কেন এখনই সিবিআই তদন্ত দেওয়া হবে না?
অন্য মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি দাবি করেন, কামদুনি কান্ডের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল। বর্তমানে যিনি কলকাতা পুলিশের কমিশনার তখন তিনি ছিলেন সিআইডির দায়িত্বে। দায়িত্ব নিয়ে তিনি তথ্য-প্রমাণ নষ্টের কাজ করেছিলেন। যে কারণে দোষীরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। এখন বিনিত গোয়েলের তত্ত্বাবধানে এই তদন্ত চললে এই ঘটনারও একই পরিণতি হবে। তাই অবিলম্বে বিনীত গেয়েলকে তার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। এই অপদার্থ অফিসার কে অবিলম্বে কম্পালসারি ওয়েটিং এ পাঠানো হোক। রাজ্য অবিলম্বে এই মামলার কেস ডায়েরী আদালতে পেশ করুক। এই ঘটনা কোন এক ব্যক্তির পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। মৃতার দেহে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন মিলেছে তাতে স্পষ্ট কোন এক ব্যক্তির পক্ষে এই অমানবিক কাজ করা সম্ভব নয়। কামদুনির ঘটনার সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে এই ঘটনার। আর বিনীত গোয়েল দায়িত্বে থাকলে এই মামলার পরিণতী হবে একই রকম।
রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা দাবি করেন, সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখে তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। কলকাতা পুলিশের উচ্চ পদস্থ এবং দক্ষ অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। আদালতে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট জমা দেবো। তাতেই বোঝা যাবে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনো রকম আপোষ করা হচ্ছে না।
আদালতের যা পর্যবেক্ষণ,এই ঘটনার প্রভাব রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগ কে বুঝতে হবে তারা সঙ্গত কারণেই কর্ম বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এই কারণে কোন নিরীহ রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হোক এটা কাম্য নয়। তাই রাজ্যকে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে।
ভয়ংকর দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতিতার বাবা-মা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে তাই আদালত চুপ করে বসে থাকতে পারে না। কেন আরজিকরের প্রিন্সিপাল পদত্যাগ করার চার ঘণ্টার মধ্যে তাকে নতুন কলেজের প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হল? কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়? তিনি কি এতটাই প্রভাবশালী যে তাকে এভাবে পুরস্কার দেওয়া হলো? অবিলম্বে তাকে বাড়িতে বসে থাকতে হবে আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি কাজ করতে পারবেন না।
রাজ্য কেন প্রিন্সিপালের বয়ান রেকর্ড করলো না? ৭২ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর ও কেন তার বয়ান রেকর্ড করা হলো না? এক্ষেত্রে তো প্রিন্সিপালের বয়ান সবার প্রথম রেকর্ড করা উচিত ছিল।
অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশদুপুর ১টার মধ্যে ঘটনার কেস ডায়েরি জমা দিতে হবে রাজ্যকে। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ছুটিতে থাকবেন আরজিকরের প্রিন্সিপাল। তিনি পদত্যাগ করেছেন সেই পদত্যাগ পত্রের কপি দেখবে আদালত। এবং পদত্যাগের পর তাকে নতুন করে নিয়োগ করার যে নির্দেশনামা সেই কপিও দেখতে চায় আদালত।
দুপুর একটায় ফের শুনানি।