ভাঙল সরকার। পড়ুয়াদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোল সফল। আওয়ামি লিগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর চূড়ান্ত অচলাবস্থা চলছে বাংলাদেশে। এই পরিস্থিতির মাঝেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়ে দিয়েছেন, পরবর্তী সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তৈরি করা হবে। সোমবার মধ্য়রাতে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন ঘোষণা করলেন, ফের নির্বাচন হবে বাংলাদেশে। খুব শীঘ্রই রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দিনের উপস্থিতিতে এই বিষয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে সেনা। যেখানে ৩ সেনা প্রধানের পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন বিএনপি, জামাতের মতো রাজনৈতিক দলগুলি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কে হতে চলেছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নাম উঠে আসছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসের নাম। সেনা শাসন সরিয়ে দেশ গড়তে এই ইউনুসকে চেয়ে ভিডিও বার্তা দিতেও দেখা গিয়েছে আন্দোলনকারী ছাত্রদের। একটা সময়ে শেখ হাসিনাকে রক্তচোষা বলে আক্রমণ করেছিলেন এই অর্থনীতিবিদ। এরপর এক মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল ইউনুসের। বর্তমানে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাইছেন ছাত্ররা। তবে এই বিষয় নিয়ে ইউনুসকে কোনও মন্তব্য করেননি।
কে এই ইউনুস ?
১৯৪০ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্ম মহম্মদ ইউনুসের। অর্থনীতিবিদ হিসেবে সমাজে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তৈরি করে ক্ষুদ্র ঋণের পরিচিতি দেওয়ার জন্য় ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি। যাঁরা সাধারণ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের সুবিধা নিতে পারেন না, তাঁরা যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন, তার জন্য এই ক্ষুদ্র ঋণের পথ প্রথম দেখান তিনিই। তাই সমাজে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য।
কেন জেলে যেতে হয়েছিল মহম্মদ ইউনুসকে ?
চলতি বছরে জানুয়ারি মাসে ৬ মাসের জেলের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল মহম্মদ ইউনুসকে। মার্চ মাসে জামিন পেয়ে যান তিনি। শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এছাড়া ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার আত্মসাত্ করার অভিযোগেও জেল হয়েছিল তাঁর। বাংলাদের গ্রামীণ টেলিকমের উন্নয়ন তহবিল থেকে ওই টাকা আত্মসাত্ করার অভিযোগে, নাম জড়ায় তাঁর।
বিচার নাকি ষড়য়ন্ত্র ?
জেল হওয়ার পর মহম্মদ ইউনুস দাবি করেছিলেন, বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে। আইন পদ্ধতি মেনে রায় ঘোষণা হয়নি বলেও দাবি করেন তাঁর আইনজীবী। মহম্মদ ইউনুস বলেছিলেন, কোনও যুক্তিকে মান্যতা না দিয়েই তার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য মুখও সবাইকে খুলতে বলেছিলেন তিনি।
জেল মুক্তির পর হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে
হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বারবার মুখ খুলেছেন মহম্মদ ইউনুস। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারের তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, বাংলাদেশ এখন একদলীয় রাষ্ট্র। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা মিছে ফেলা হয়েছে। রাজনৈতিক পরিবেশ যে বাংলাদেশে আবার কখনও ফিরবে, সেই আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন ইউনুস। এবার তাঁকেই বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা।
এই মূহূর্তে মহম্মদ ইউনুসের প্রধানমন্ত্রী হবার দাবি ক্রমশ জোড়ালো হয়ে উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধানসম্মনায়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন, ডঃ ইউনুসকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তারা দেখতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডঃ ইউনুস বলেন, বাংলাদেশ যতদিন অস্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে ততদিন ক্রমশ আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হবে। যার প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গ-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যে। এ থেকে স্পষ্ট, ডঃ মহম্মদের ইউনুসের প্রধানমন্ত্রী হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। তার সাপেক্ষে য়ে আন্তর্জাতিক যেসমস্ত সংস্থা রয়েছে এবং বিভিন্ন দেশ তাতে সমর্থন দেবে বলেই আশা করছে আন্তর্জাতিক মহল।