পৌষালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মহম্মদ ইউনুসকে বিশ্বাস করে সরকারি উপদেষ্টার গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন সেখানকার জনগণ। ইউনুসকে আপাতত কাজ চালানোর মতো বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বানিয়েছেন তাঁরাই। সেই উপদেষ্টার ১০০ দিনও পেরোতে না পেরোতেই ক্ষোভের সঞ্চার। ইউনুসের সরকার তৈরির পরও ক্রমশই বলগাহীন হতে থাকে পরিস্থিতি। উত্তপ্ত বাংলাদেশের ছবি না বদলানোয় এবার ইউনুসের বিরুদ্ধেই ক্ষোভে ফুঁসছেন পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের একাংশ। অন্যদিকে বিপক্ষে থাকা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার কাছেও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইউনুস।
হঠাৎ কেন চক্ষুশূল ইউনুস ?
হঠাত্ কেন সকলের চক্ষুশূল হয়ে উঠলেন ইউনুস ? আসুন, আপনাদের জানাই সেই কারণ। আসলে মঙ্গলবার ঢাকার রাস্তায় নেমে এসেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। এর মধ্যে বিএনপির অসংখ্য কর্মী-সমর্থকও ছিলেন। বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঢাকায় থাকা দলীয় কার্যালয়ের বাইরে জমায়েত হন। আন্দোলনকারীরা দাবি করতে থাকেন, বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নয়া সরকার গঠন করা হোক।
ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে পথে জনতা
আবারও জনতার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ছবি উঠে আসছে হাসিনা বিনা বাংলাদেশে। ৫ অগাস্ট, ২০২৪ মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে উপদেষ্টা সরকার বানানো হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছিল নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুসকে। এই সরকার কিছুদিনের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে নির্বাচন করানোর জন্য কোনও সময়সীমাই ঠিক করা হয়নি। এরই মাঝে এবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে পথে হাজির বাংলাদেশের মানুষ।
নির্বাচনের চতুর্দিক
নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে ৪ টি দিক তৈরি হয়েছে—
১. বিএনপির মত, ২. জামায়াতের মত, ৩. সেনাপ্রধানের মত এবং ৪. প্রধান উপদেষ্টার মত।
১. বিএনপির দাবি দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচনের মাধ্যমে নয়া সরকার গঠন করতে হবে।
২. জামায়াতের দাবি নির্বাচন সময় নিয়েই করা উচিত।
৩. সেনাপ্রধানের বক্তব্য ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন করা হবে।
৪. প্রধান উপদেষ্টা এখনও নির্বাচনের দিনক্ষণ জানায়নি। তবে মানুষ যতদিন চাইবেন-ততদিন এই পদে থাকবেন বলে জানিয়েছেন ইউনুস।
সেনাপ্রধান-প্রধান উপদেষ্টার সুসম্পর্ক
সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান এ নিয়ে আরও বলেছেন, সময়সীমা এতটা থাকা উচিত যাতে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা যায়। এই দড়ি টানাটানি পরিস্থিতিতে প্রতি সপ্তাহেই দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এবং সেনাপ্রধান। এবং তাঁদের মধ্যে বারবারই সুসম্পর্কের ছবিই দেখা গিয়েছে। দেশকে স্থিতিশীল করতে সরকারের প্রচেষ্টায় সামরিক বাহিনী সমর্থন করছে। সেনাপ্রধান আরও বলেছেন, আমরা নিশ্চিত একযোগে কাজ করলে ব্যর্থ হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না। আমি যেমন পেশাদার সৈনিক, তেমনই আমার বাহিনীকেও রাখতে চাই।
নিউ-ইয়র্কে ইউনুসের বিরোধিতা
অন্যদিকে, ইউনুস যখন আমেরিকায় বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারছেন, তখন ইউনুসের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশের ছবি দেখা গিয়েছে নিউ ইয়র্কেও। সেখানে থাকা বিএনপি সমর্থকরা আওয়াজ তুলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করছে ইউনুসের সরকার। এই সরকার অবৈধ। ইউনুসের সরকার আসার পর থেকে বিনা বিচারে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ জানানো হয় নিউ ইয়র্কে থাকা বিএনপি সমর্থকদের তরফে। ইউনুসের সরকারের বিরোধিতায় আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরাও নিউ ইয়র্কে পথে নামেন। যদিও এ বিষয়ে আবার ইউনুসের মত, স্বতন্ত্র এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনই জনতার রাজনৈতিক স্বশক্তিকরণ সুনিশ্চিত করতে পারে।
ফ্যাক্টর যখন জনমত
সবমিলিয়ে এতকিছুর মাঝে জনগণ কি চাইছে, সেটাই চাপা পড়ে গিয়েছে। ক্ষোভে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার ও নির্বাচনে তাঁদের অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া। বাংলাদেশে হাসিনা না থাকলেও তাঁর ওপর অনেকেই আস্থা ফেরাচ্ছেন। কারণ সম্প্রতি হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় হাসিনার পদত্যাগের কথাই অস্বীকার করেছেন। যার ফলে হাসিনা কিংবা তাঁর দলের এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে ইউনুস, বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলির কাছে। যা নিয়েই ফের ক্ষোভের সঞ্চার বাংলাদেশের একাংশের মনে। কারণ সরকার বিশ্বস্ত না হলে জনমত বদলাতে বিশেষ সময় লাগবে না।