রিয়া দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ উত্তাপ বাড়ছে পাকিস্তানে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাঁর মুক্তির দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। ইমরানকে মুক্তির দেওয়ার দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই পথে নামছে তাঁর হাজার হাজার সমর্থকেরা।
ইমরানকে মুক্তির দাবিতে পথে সমর্থকেরা
পাকিস্তানের কারাবন্দী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। দাবি তুলে আবারও পথে নামলেন তাঁর হাজার হাজার সমর্থকেরা। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলবন্দি ইমরান। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ১৫০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় দোষীও সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। তবে তাঁর অগণিত সমর্থকদের দাবি, শীঘ্রই মুক্তি দিতে হবে ইমরানকে। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ নাকি ভিত্তিহীন। আর সেই দাবি জানাতেই রবিবার রাজধানী ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে জড়ো হন ইমরানের অগণিত সমর্থক। ক্যাপ্টেনের মুক্তির দাবিতে সরব হন তাঁরা। স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। শাহবাজ সরকারের মূল সমালোচক তথা ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রাজনীতিতে ইমরানের জনপ্রিয়তা
পাক ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন থেকে রাজনীতিতে পা দেওয়া ইমরান রাজনীতিবিদ হিসাবেও দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ২০১৮ সালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন তিনি। ২০২২ সালে পাক আইনসভায় অনস্থা ভোটে হেরে গিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে। পরে গ্রেফতারও হন। তবে তাঁর সমর্থকদের দাবি, ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। পাক জনগণ ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে জোর করে কারাবন্দি রাখা হয়েছে তাঁকে। আর সেই কারণেই ইমরানের মুক্তির দাবিতে জনতার ঢল নামে ইসলামাবাদে। মনে করা হচ্ছে, গত রবিবারের সমাবেশ পিটিআই দ্বারা অনুষ্ঠিত এই বছরের বৃহত্তম ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ছিল। যদিও বেশ কয়েকটি জায়গায় কয়েকজন পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবরও প্রকাশ্যে এসেছে।
সরকার বিরোধী আন্দোলনকে তীব্র করার হুঁশিয়ারি
বিক্ষোভকারীদের সমাবেশে আসায় বাধা দিতে প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উপর বড় বড় কন্টেনার রেখে অবরোধ করা হয়। কয়েকটি এলাকায় পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ইমরানের মুখপাত্র জুলফি বুখারি এক বিবৃ্তিতে পুলিশের এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন। জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের শীর্ষ পিটিআই নেতা আলি আমিন বলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা শীঘ্রই ইমরান খানের মুক্তি নিশ্চিত করব। ইমরানের ১০ হাজারেরেও বেশি সমর্থককে দলের পতাকা নেড়ে তাঁর মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল সোয়াবিতে। সেই সমাবেশ থেকেই সরকার বিরোধী আন্দোলনকে আরও তীব্র করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পিটিআইয়ের শীর্ষনেতারা।সেই আবহে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বাংলাদেশের পথেই হাঁটছে পাকিস্তান ? বিশেষজ্ঞদের মতে, ইমরানের মুক্তির দাবিতে দেশজোড়া বিক্ষোভের ডাক দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে পিটিআই।
দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০২৩ সালের ৫ অগাস্ট থেকে জেলবন্দি রয়েছেন ইমরান। বর্তমানে পাকিস্তানের আদিয়ালা জেলে বন্দি তিনি। তাঁর গ্রেফতারির এক বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তবে এ নিয়ে গত এক বছরে একাধিক বার সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে পাকিস্তানে। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী তথা জেলবন্দি নেতা ইমরান খানকে ফেরাতে তৎপর ইমরানের সমর্থকেরা।
বিক্ষোভের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পিটিআই। তাঁদের মধ্যে গহর আলি খান ছাড়াও আছেন আমির দোগার। মিত্র দল সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলর প্রধান সাহেবজাদা হামিদ রাজাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। গহর আলি খান ও আফজাল মারওয়াতকে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে থেকে পৃথকভাবে হেফাজতে নেওয়া হয়। সোমবার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শেষে বাইরে বের হওয়ার পর পুলিশ তাঁদের গাড়িতে করে নিয়ে যায়। পিটিআই নেতা জেইন কুরেশি, জারতাজ গুল, শেখ ওয়াকাস আকরাম, সিমাবিয়া তাহিরকেও গ্রেফতারের জন্য খুঁজছিল পুলিশ। গ্রেফতারের আতঙ্কে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পার্লামেন্ট ভবনে আশ্রয় নেয়।