মাম্পি দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কোটা সংস্কার আন্দোলন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন। অবশেষে চাপে পড়ে দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ। এর পিছনে রয়েছে চূড়ান্ত অশান্তি, অসংখ্য মানুষের হত্যালীলা। ইতিমধ্যে সেদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। দায়িত্ব নিয়েছেন মহম্মদ ইউনুস। তাঁর হাত ধরে একটু একটু করে শান্তি ফিরছে বাংলাদেশে। এরই মধ্যে নিউ ইয়র্ক সফরে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মহম্মদ ইউনুস। কী বললেন তিনি ?
নিউ ইয়র্ক সফরে ক্লিন্টন গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে গিয়ে মহম্মদ ইউনুস বলেন, বাংলাদেশের গণ অভ্যূত্থান নাকি পূর্বপরিকল্পিত। তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া কয়েকজন সাংবাদিককে মঞ্চে তোলেন ইউনুস। মাহফুজ আলমকে মঞ্চে ডেকে ইউনুস ক্লিন্টনকে বলেন, গোটা আন্দোলনের নেপথ্যে এর মস্তিস্ক রয়েছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর নেতা মাহফুজ এখন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। বাংলাদেশে যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল, সেটার সমন্বয় কমিটির অন্যতম মুখ ছিলেন মাহফুজ। তবে নাহিদ ইসলামদের মতো সামনের সারিতে থাকতেন না তিনি। পিছন থেকে পুরো বিষয়টা কন্ট্রোল করতেন বলে বিভিন্ন মহলে দাবি করা হয়েছে। পরবর্তীকালে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তাঁকে ইউনুসের বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। সচিব পদমর্যাদাও দেওয়া হয় মাহফুজকে।
এছাড়াও যে দু’জন তরুণ-তরুণীকে ইউনুস মঞ্চে ডেকে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছেন, তাঁরা হলেন সুচিস্মিতা তিথি ও নাইম আলি। এঁরা দু’জনেই দু’টি কাগজের সাংবাদিক ছিলেন। সম্প্রতি তাঁদের ইউনুসের সহকারী প্রেস সচিব হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আন্দোলনে এই দু’জন রিপোর্টারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।হাসিনাকে উৎখাতের আন্দোলনকে অংশগ্রহণকারী সংগঠকদের একাংশ বাংলাদেশের আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থান বলছেন, কেউ আবার বলছেন বিপ্লব। বিষয়টিকে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন এবং গণবিক্ষোভ বলেও বর্ণনা করা হচ্ছে। কিন্তু বিল ক্লিন্টনের সংগঠনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস বলে বসলেন, গোটা আন্দোলনটাই নাকি আদতে চমৎকার ভাবে পূর্ব পরিকল্পিত। যা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। ইউনুসের কথামতো, যদি সবটা পূর্ব পরিকল্পিত হয়, তাহলে বিপুল হত্যালীলা, ধ্বংসলীলা সবটাই কি তবে প্রাক পরিকল্পনার ফল ? জেল ভেঙে জঙ্গি ও অপরাধীদের মুক্ত করাও কি পরিকল্পনার ফল? এমনই একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।
লেখিকা তসলিমা নাসরিন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘আমেরিকায় দাঁড়িয়ে ইউনুস হাসিনাকে উৎখাতের আন্দোলনের প্রধান হোতা হিসাবে নিষিদ্ধ ইসলামি জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতা মাহফুজ় আলমের নাম ঘোষণা করেছেন। বিল ক্লিন্টন পাশে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছেন। এই কি সেই আমেরিকা, যারা গণতন্ত্রের কথা বলে? ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে?’একদিকে যখন ইউনুসের মন্তব্যে বিতর্ক ছড়িয়েছে, তখন বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়েও মুখ খুললেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস বলেন, বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে, তার কোনো সময়সীমা তাঁর কাছে নেই। যে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা আগামী মাসগুলোতে সংস্কার সুপারিশ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারপর নির্বাচনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা তাঁর নেই বলেও জানান মহম্মদ ইউনুস। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমি নির্বাচনে লড়ব?’
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো বা প্রত্যার্পণ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনুস বলেন, ‘কেন হবে না?’ অপরাধ করে থাকলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। সবমিলিয়ে এতদিনের আন্দোলন, অস্থিরতা, হত্যালীলা এসব কোনওকিছুই ছাত্র আন্দোলনের অংশ ছিল না বলে উঠে এসেছিল। পরবর্তীকালে জঙ্গিরা সেই আন্দোলনের দখল নিয়েছিল বলেও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু খোদ বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের মুখে ছাত্র আন্দোলন পূর্ব পরিকল্পিত বলে উঠে আসবে, তা কেউ ভাবতে পারেনি। ৩ বছর ধরে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন ইউনুস। তবে কি শেখ হাসিনার সরকারকে মোকাবিলা করতে না পেরেই এধরণের আন্দোলন? তবে কি বিশ্বের বড় বড় শক্তি এই পরিকল্পনার অংশ নিয়েছিল? প্রশ্ন উঠছেই।