পৌষালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ফের যোগী-রাজ্যে গণধর্ষণের অভিযোগ। এবার দুষ্কৃতীদের লাগাতার যৌন লালসার শিকার অযোধ্যার রামমন্দিরে সাফাইয়ের কাজে নিযুক্ত এক তরুণী ছাত্রী। শুধু তাই নয়, তরুণীকে বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য হুমকিও দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, অন্যত্র কাজ দেওয়ার অছিলায় ফুসলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানো হয় ওই তরুণীর উপর। ঘটনার তদন্তে নেমে অযোধ্যার বাসিন্দা ৮ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কীভাবে ঘটল এত বড় ঘটনা ?
এ প্রসঙ্গে পুলিশকে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, বংশ চৌধুরী নামে প্রধান অভিযুক্ত তাঁকে রামমন্দিরের সাফাইকর্মীর কাজ ছেড়ে মোটা মাইনের চাকরির অফার দেয়। এরপর কাজের কথা পাকা করতে স্থানীয় এক গেস্ট হাউসে তাঁকে ডেকে পাঠায় অভিযুক্তরা। সেখানেই মূল অভিযুক্ত বংশ ও তার বন্ধুরা মিলে গণধর্ষণ করে ওই তরুণীকে। ১৬ থেকে ১৮ অগাস্ট টানা ২ দিন ধরে চলে নারকীয় অত্যাচার। এত অত্যাচারের মাঝেও অভিযুক্তদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে আসেন তরুণী। নির্যাতিতা বাড়ি ফিরলেও তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে লাগাতার চাপ দেয় অভিযুক্তরা। তবে এখানেই শেষ নয়। এরপর ২৫ অগাস্ট মন্দিরে যাওয়ার পথে ফের তাঁকে অপহরণ করে গাড়িতে তোলে বংশ। গাড়ির ভিতরে যেতেই তরুণী দেখেন সেখানে রয়েছে বংশের বন্ধু উদিত কুমার, শতরাম চৌধুরী ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ২ যুবক। এরপর ফের যৌন হেনস্থা। গাড়িতেই চলতে থাকে ধস্তাধস্তি। এর মাঝে গাড়িটি রাস্তার এক ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যাওয়ায় কোনওমতে ফের পালাতে সক্ষম হন নির্যাতিতা। এরপর থানার দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা। থানায় সব ঘটনার বিশদ বিবরণ দিলেও প্রাথমিকভাবে সেখানেও হেনস্থার শিকার হন তিনি। নির্যাতিতাকে বলা হয় তিনি যেন শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে তাঁর সঙ্গে হওয়ার অত্যাচারের প্রমাণ দেন। মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হলে সেখানেও হেনস্থার শিকার হন ওই তরুণী। অভিযোগ, ৩৬ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। এরপর মামলা দায়ের হলেও এফআইআরয়ের কপিও তাঁকে দেওয়া হয়নি। এমনকি নির্যাতিতার পরিবারকেও ভয় দেখানো হয়। নির্যাতিতার আরও অভিযোগ, তাঁর লেখা অভিযোগ নেওয়া হয়নি, বরং পুলিশ অফিসারদের লেখানো বুলিই লিখতে বলা হয় তাঁকে। যার ফলে আসল এফআইআর লেখা হয়না।
পুলিশের তরফে দাবি
এদিকে, অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ২ সেপ্টেম্বর একটি মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল অভিযুক্ত বংশকে চারবছর ধরে চিনত ওই কলেজ ছাত্রী। তাকে বিশ্বাস করেই এত বড় ঘটনা ঘটে। মূল অভিযুক্তের বন্ধুদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না।
সরব অখিলেশ
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তা নিয়ে সরব হন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। পরিবারের পাশে থাকার বার্তা ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে অখিলেশ লেখেন, এই ঘটনার ফলে উত্তরপ্রদেশে হওয়া মহিলা উৎপীড়ন ও অত্যাচারের আসল কারণ সামনে চলে এসেছে। পুলিশ প্রশাসনকেও কাঠগড়ায় তোলেন সপা প্রধান। তিনি লেখেন, কিছু অসংবেদনশীল পুলিশের জন্যই নির্যাতিতাকে এফআইআর লেখাতে এতটা হেনস্থার মুখে পড়তে হল। রিপোর্ট লেখানোর জটিলতার জন্য কত অপরাধ আজও ধামাচাপা পড়ে।বারবারই ধর্ষণের ঘটনায় শিরোনামে উঠে এসেছে যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের নাম। এবার রামরাজ্যেই।