রিয়া দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃবাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে নয়াদিল্লি। তবে প্রতিপদেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা এবিটিয়ের প্রধান জমিসউদ্দিন রহমানিকে জেল মুক্তি দেওয়ায় সাউথ ব্লকের কাছে বড় ধাক্কা। পাশাপাশি বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতির সুযোগ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েক জন কট্টর জঙ্গি জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে। ফলে অসম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ-সহ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ এবিটি গত কয়েক বছর ধরেই সন্ত্রাসের জাল বিস্তার করছে এপার ও ওপার বাংলায়।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের বিশ্বাস, আল-কায়দা ও পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে এবিটির। অসমে সম্প্রতি এবিটি সদস্য গ্রেফতারও হয়। ত্রিপুরা পুলিশের হাতেও ধরা পড়েছে এই সংগঠনের স্লিপার সেলের কয়েকজন সদস্য। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও বিশেষ অভিযান চালিয়ে গত বছর নব্য জেএমবির ও এবিটি জঙ্গিদের গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের জেরা করে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পারছেন, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে এবিটি ভারতেও নাশকতার ছক কষছে বহু দিন ধরেই। তাই এবিটি প্রধান রহমানির মুক্তি ভারতের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ। তাই ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসকে ফোনেই শুভেচ্ছা জানিয়ে দিল্লির অবস্থান স্পষ্ট করেন ইউনুসের শপথ গ্রহণের পরেই। পরবর্তীতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় বর্মা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারও বারবার দিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলছে। জামাতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানও বলেছেন, তাঁরাও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান। ইসলামি জঙ্গিবাদকে জামাত সমর্থন করে না, এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি। বিএনপির তরফেও পুরনো শক্রতা ভুলে বন্ধুত্বের বার্তা পৌঁছেছে দিল্লিতে। তবে তারপরেও ভারতের স্বস্তির বিশেষ কারণ নেই বলে মনে করা হচ্ছে। তার একটি বড় কারণ জসিমুদ্দিন রহমানির মুক্তি। এবিটির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের অভিযোগের শেষ নেই। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজীব হায়দারকে খুনের অভিযোগে রহমানিকে গ্রেফতার করেছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ। তবে গত ২৫ অগাস্ট সেই এবিটি নেতাকেই জামিনে মুক্তি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সীমান্তবর্তী এলাকার মাদ্রাসাগুলিতে জঙ্গি কার্যকলাপে মদত জোগানোর অভিযোগ রয়েছে এবিটির (ABT) বিরুদ্ধে।
হাসিনা সরকার আসার আগে ভারতের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শক্ত ঘাঁটি ছিল বাংলাদেশ। রিপোর্ট অনুযায়ী, সে সময়ে অসমের আলফা, ত্রিপুরার এটিটিটিএফ ও এনএলএফটি-সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন রীতিমতো প্রশিক্ষণ শিবির খুলে বসেছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায়। আইএসআইয়ের মদতে প্রশিক্ষণ চলত ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। ২০০৯ সালের এর পর বাংলাদেশের মাটিতে জায়গা না পেয়ে জঙ্গিরা অনেকেই আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে। তবে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা থামেনি। বিশেষ করে মাদ্রাসগুলিকে কাজে লাগিয়ে ফের অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করে এবিটি। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় জঙ্গি তৎপরতার বড় প্রমাণ ২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াও স্বীকার করেন এই বিপুল অস্ত্র তাদের জন্যই বাংলাদেশে এসেছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যে ভাবে জঙ্গিরা মুক্তি পাচ্ছে, তাতে চিন্তা বাড়ছে দিল্লির। ভারতের আশঙ্কা, নতুন করে বাংলাদেশের মাটি জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য ব্যবহ্ত হতে পারে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম থেকেই কড়া হাতে জঙ্গিবাদ দমন করা না হলে ফের অশান্ত হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপগুলি উদ্বেগজনক। জঙ্গি ও দাগি আসামীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে জন প্রবাহে মিশিয়ে দেওয়া কেবলমাত্র বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকেই নয়, বৃহত্তর আঞ্চলের স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করে। এই মতে নির্দিষ্টভাবে একটি প্যাটার্টের দিক নির্দেশ করে। নয়া বাংলাদেষ কি তাহলে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলির জন্য একটি নতুন আশ্রয়স্থলে পরিণত হতে পারে ? এই পরিবর্তন আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে ? যা চরমপন্থী দলগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকাকেও ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ। অতত্রব, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি আজ আর শুধুমাত্র বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এর গভীর প্রভাব প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশেই পড়বে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ক্রমশই এক কঠীন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।