রিয়া দাস, প্রতিনিধি : ইসলামাবাদ আর দিল্লির সম্পর্ক নিয়ে কিছুতেই যেন বিতর্ক থামতে চায় না। তবে এরই মধ্যে দীর্ঘ ৯ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় এক দশক। সেই ২০১৫ সালের পর ভারত ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক বলতে সেভাবে কিছুই ছিল না। এবার এসসিও সামিটে যোগ দিতে ইসলামাবাদ গিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ১৫ ও ১৬ অক্টোম্বরের এই দুইদিনের সম্মেলন কি ভারত ও পাকিস্তানের সুসম্পর্কে পুনঃপ্রতিষ্ঠান করতে পারবে ?
দীর্ঘ বিরতির পর সম্মেলনের আগে নৈশভোজে ২০ সেকেন্ডের সৌজন্য দেখল ইসলামাবাদ। নিজের বাসভবনে আফিসিয়াল নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এসসিও সম্মেলনে র জন্য আসা অতিথিদের জন্য এই বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন। সেখানেই পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ২০ সেকেন্ডেরও কম সৌজন্য সাক্ষাৎ সারলেন তিনি।
ইসলামাবাদ যাওয়ার আগেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তিনি পাকিস্তানে যাচ্ছেন শুধুমাত্র এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে। সেখানে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনা নেই।
২০১৫-১৬ সালে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা ভারতের সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালানোর চেষ্টার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঠিক নেই। কিছুদিন আগেই বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রত্যেক প্রতিবেশী দেশের মতো পাকিস্তানের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক চায় ভারত। কিন্তু এই সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ না হলে তা সম্ভব নয়। সৌজন্য সাক্ষাৎ-এর পর ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, পারস্পারিক সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আফগানিস্তান ইস্যুতে ২৭টি দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ৯ বছর পর পাকিস্তানে গেলেন ভারতের কোনও বিদেশমন্ত্রী।
ভারত এবং পাকিস্তান ছাড়াও চিন ও রাশিয়া, তাজাকিস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান-সহ বেশ কয়েকটি দেশ এই সাংহাই কোঅপরেশন অর্গানাইজেশনের সদস্য। এসসিও অন্তভূক্ত দেশগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করে থাকে। প্রথামাফিক পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সব সদস্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানান। গত অগাস্ট মাসে আমন্ত্রণপত্র আসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও। তবে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠে যে, মোদি কি এই সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানে যাবেন ? নানা জল্পনার পর অবশেষে বিবৃতি দিয়ে বিদেশমন্ত্রক জানান এসসিও সামিটে যোগ দিতে পাকিস্তানে যাবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেই মতো ৯ বছর বাদে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর পাকিস্তানে সামিটে যোগ দেন।
এই সামিটে যোগ দিলেও ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে যে খুব উন্নতি হবে না, তেমনই মত কূটনৈতিক মহলে। কারণ ভারতের অবস্থান স্পষ্ট, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। ২০২৩-এ এই এসসিও সম্মেলন আয়োজিত হয়ছিল গোয়ায়। সেইবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে যোগ দেননি। বদলে পাকিস্তানের এসেছিলেন তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো। সেই সময় নয়াদিল্লি বিলাওয়ালকে কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতার বাইরে কোনওরকম সৌজন্য দেখায়নি। অতএব ইসলামাবাদে এবছর ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এসসিও সম্মেলনে যোগ দিলেও ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের তিক্ততা যে কমবে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না।