মাম্পী রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশে চিনা সেনার প্রবেশের আশঙ্কা ছিলই। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। চিনা নৌসেনার জাহাজ ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মহম্মদ ইউনুসের ডাকেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে চিনা জাহাজগুলি।
বাংলাদেশ ৩ দিক দিয়ে ভারতের সীমান্তে ঘেরা। প্রায় ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার ভারতের সীমান্তে ঘেরা বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরামের সীমান্ত বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের দক্ষিণ দিক একমাত্র দিক যেখানে ভারতের সীমান্ত নেই। সেদিকে রয়েছে শুধু বঙ্গোপসাগর। সেই বঙ্গোপসাগর দিয়েই বাংলাদেশে ঢুকছে চিনা নৌসেনার জাহাজ। শেখ হাসিনার সরকার চলে যাওয়ার পর এই প্রথম চিনা নৌসেনার জাহাজকে বাংলাদেশে ঢুকতে দিয়েছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ভারতের বিরুদ্ধে। কারণ ভারতের কাছে ডেরা বানানোর পাশাপাশি ভারতে দিব্যি নজরদারিও চালাতে পারে এই চিনা নৌসেনার জাহাজ। সেইসঙ্গে ভারতে অনুপ্রবেশের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। চিনা নৌবাহিনীর জাহাজদুটির মধ্যে একটি চি জি গুয়াং ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছয়। এমভি কোটা আংগুন নামে আরেকটি জাহাজ চিন থেকে পণ্য নিয়ে মাত্র ৯ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। ১৬ সেপ্টেম্বর বন্দরের ১৩ নম্বর জেটিতে নোঙর করে জাহাজটি। এটি বিশ্বের ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দরের শীর্ষস্থানে থাকা পোর্ট অব নিংবো-ঝুশান থেকে ৫৫২টি কনটেইনার নিয়ে আসে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর। চিনা জাহাজগুলি বাংলাদেশে পৌঁছতেই চিনা নৌবাহিনীর সফররত ফ্লিট কম্যান্ডার, জাহাজের অধিনায়ক, বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনা দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ন্যাভাল অ্যাকাডেমি কম্যান্ডান্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সারেন। এই সফরের মধ্যে দুই দেশ ও নৌবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। নৌসেনা বাহিনীর এই শুভেচ্ছা সফরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাফ বার্তা দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশে যে সরকারই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেমনই পরিবর্তন হোক না কেন, চিনকে নিয়ে তাদের নীতির কোনও পরিবর্তন হবে না। যেকোনও পরিস্থিতিতে তাদের লাইন অফ ডিফেন্স কোনওদিনই চিনের বিরুদ্ধে যাবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ। চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কথাও জানিয়েছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার। একইসঙ্গে চিনের সহযোগিতায় তৈরি বাংলাদেশের সাবমেরিন ঘাঁটির যে কার্যক্রম তা জোরদার করার প্রক্রিয়া চলছে। এই সাবমেরিন ঘাঁটি কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, তারও আলোচনা হয়েছে।
গত কয়েক বছরে চিনা নজরদারি জাহাজ ‘ইউয়ান ওয়াং ৫’, ‘হাই ইয়াং ২৪ হাও’ এবং ‘শি ইয়ান ৬’ ভারতের প্রতিবেশী দুই দ্বীপরাষ্ট্র, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা এবং মলদ্বীপের মালে বন্দরে সামরিক ঘাঁটি গেঁড়েছিল। যা নিয়ে ওই দুই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েন হয়েছে। কিন্তু হাসিনা সরকারের জমানায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে সামরিক কার্যকলাপের সুযোগ পায়নি শি জিনপিং সরকার। চিনের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি বিরাট অঞ্চলের নিকটতম সমুদ্রবন্দর হল চট্টগ্রাম, তাই কুনমিং থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণের আগ্রহ রয়েছে বেজিংয়ের। হাসিনার সময়ে যা সম্ভব হয়নি চিনের পক্ষে। তাই ইউনুসের সময় সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না চিন।
আগেই ভারতের কাছাকাছি জাহাজ ঢুকিয়ে নজরদারি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে চিন। এবারেও বাংলাদেশে ঢোকার নাম করে ভারতে নজরদারি জাহাজ ঢোকানোর পরিকল্পনা নয় তো ? সেই প্রশ্ন উঠছে। এরইমধ্যে একটি সূত্রে খবর, স্যাটেলাইট চিত্রে ইতিমধ্যেই চিনা জাহাজের অবস্থান চিহ্নিত করা গিয়েছে। ভারতের পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর নজরদারি করতেই চিনা যুদ্ধজাহাজগুলি বার বার উপকূলের কাছে আসছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।
সবমিলিয়ে এটা স্পষ্ট বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপের মতো বাংলাদেশের কোনও বন্দরও চিনা নজরদারি জাহাজের ঘাঁটি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। গত কয়েকবছরে ভারতের প্রতিবেশী দুটি দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা এবং মালদ্বীপের মালে বন্দরে চিনা নজরদারি জাহাজ ইউয়ান ওয়াং ৫, হাই ইয়াং ২৪ হাও এবং শি ইয়ান ৬ সাময়িক ঘাঁটি গেঁড়েছিল। হাসিনা সরকারের আমলে চিন চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে সামরিক কার্যকলাপের সুযোগ পায়নি। কুনমিং থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণে আগ্রহ রয়েছে বেজিংয়ের, হাসিনার সময়ে যা সম্ভব হয়নি।