মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আন্দোলনের চাপে অগাস্ট মাসে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপাতত দিল্লিতেই রয়েছে শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন খোদ ভারতের বিদেশ সচিব রণধীর জয়সওয়াল। এদিকে জুলাই অগাস্টে গণহত্যার অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যে হাসিনাকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার করতে গেলে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরাতে হবে। হাসিনাকে কি দেশে ফেরাতে পারবে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ?
বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা মহ: তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, দিল্লি থেকে হাসিনাকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবিষয়ে কবে কী পদক্ষেপ করা হবে ? তা খোলসা করেননি তিনি। এর আগে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন মহম্মদ ইউনুস। সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আমেরিকায় গিয়েছিলেন ইউনুস। সেইসময় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমেরিকাতেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুপক্ষের বৈঠকের সম্ভাবনা থাকলেও পরবর্তীকালে তা হয়নি। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই বৈঠক করতে চাননি। বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা ছিল বলেই মোদী যোগ দিতে চাননি বলে মনে করছেন বাংলাদেশের বিশ্লেষকদের একাংশ। কিন্তু ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে- সময় না মেলার কারণেই বৈঠক করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
৫ অগাস্ট আন্দোলনের চাপে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৬০টির বেশি খুন ও অপহরণের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৫৪টিতে মূল অভিযুক্ত শেখ হাসিনা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যার্পণ চুক্তি রয়েছে। ২০১৩ সালে এই চুক্তি হয়। ২০১৪-এ এই চুক্তির সংশোধনী আনা হয়। ২০১৬ সালের সংশোধনী অনুযায়ী, অপরাধী প্রত্যার্পণের ক্ষেত্রে প্রমাণ প্রয়োজন। অর্থাৎ আদালতকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী যদি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা হয় এবং তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, বা দেশের আদালতের মাধ্যমে প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের কারণে কাউকে ফেরত চাওয়া হয়, তাহলে তাকে ফেরত দেওয়া হবে। প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধে সর্বনিম্ন একবছরের কারাদন্ড হয়। এর মধ্যে আর্থিক অপরাধও রয়েছে। অপরাধটি দুই দেশে শাস্তিযোগ্য হতে হবে। এছাড়া প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের চেষ্টা বা তাতে সহযোগিতা করলেও ওই ব্যক্তিকে ফেরত দেওয়া যাবে।
শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ চুক্তি কী বলছে ?
রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রার্থনা করতে পারেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে, এর মধ্যে হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।এই প্রত্যার্পণ হবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। ভারত চাইলে শেখ হাসিনাকে নাও ফেরত দিতে পারে। ভারত বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ চুক্তির ৮ নম্বর ধারায়, যাকে প্রত্যার্পণ করা হচ্ছে, তাকে বিচারের আওতায় আনার উদ্দেশ্য বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলে প্রত্যর্পণ নাও করা যেতে পারে। তবে এমন হলে ঢাকা দিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন হতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের একাংশের। তবে ২০১৩ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়েছিল। যা শেখ হাসিনার সময়েই হয়েছিল। যেখানে বাংলাদেশ থেকে হাসিনার সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলা হচ্ছে, সেখানে কি হাসিনার সময়ে হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তি এক্ষেত্রে মানা হবে, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।