পৌষালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চলতি বছর ৫অগাস্ট বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের পতন এবং দেশত্যাগ। এরপর থেকেই ঝুলে রয়েছে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার ভবিষ্যত্। এবার তাঁকেই ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলে রাষ্ট্রসংঘকে জানিয়ে দিল ইউনুস সরকার। সঙ্গে বলে দেওয়া হল হাসিনার ভবিতব্যও। কী পরিকল্পনায় এগোচ্ছে ইউনুস সরকার, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
গণহত্যার দায়ে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসি দেওয়ার প্রস্তাব উঠে এল বাংলাদেশে হওয়া একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে। এই প্রসঙ্গ উথ্থাপন করে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান ভলকার তুর্ককে তা জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি স্পষ্টতই জানিয়ে দেন, জুলাই-অগাস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর ঘটনায় শুধু শেখ হাসিনাই নন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাঁদের সকলকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৬ জুলাই পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটে মৃত্যু হয়েছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের। গোটা বিশ্ব দেখেছিল সেই দৃশ্য। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আর এক নেতা সাইদুর রহমানের খুনের ঘটনায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ আওয়ামী লীগের ১৪৩ জনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নিহত সাইদুরের মা লাভলি বেগম।
এই গণহত্যার তদন্তেই ঢাকা সফর করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোষ্য এজেন্ট হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান ভলকার তুর্ক। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে তুর্ক জানতে চান, গণহত্যার সঙ্গে যুক্তদের কী ধরনের শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার? ওই সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সঙ্গীদের ফাঁসি হবে। মৃত্যু ব্যতীত অন্য কোনও সাজাই গ্রাহ্য নয়।
এরপরই আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধানকে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে হত্যাকারী সরকারের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সেই শাস্তি বাতিলের প্রশ্নই আসে না।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদও হাসিনার ফাঁসির দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ এদেশে রাজনীতি করতে পারবে কি না সেটি সিদ্ধান্ত নেবে এদেশের জনগন। তবে খুনি হাসিনাকে দেশে আসতে হলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি হয়ে আসতে হবে। গণহত্যার দায়ে তাঁকে ফাঁসি দিতে হবে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা দিয়ে সাপের মতো পিটিয়ে যেভাবে মানুষ হত্যা করেছিল তার নির্দেশদাতা দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। তাদের অপরাধের কারণেই ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়। একজন রাষ্ট্রপ্রধানের এভাবে পালিয়ে যাওয়ার নজির বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই।
হাসিনাকে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে বিএনপির তরফেও। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান বলেছেন, ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। শত শত নারীকে লাঞ্চিত করা হয়েছে। এই সকল হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে। শেখ হাসিনার মাথা পালিয়ে গেলেও তাঁর প্রেত্মাতারা রয়ে গেছে। তাঁর সেসব সাঙ্গ-পাঙ্গরা দেশে এখনও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
আগেই জানা গিয়েছিল, মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপকদের গণহত্যার দায়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগিদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। শুধমাত্র হাসিনার বিরুদ্ধেই দেশের বিভিন্ন থানায় ২২৭ টি হত্যা মামলা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ১৭ অক্টোবর নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। জামায়াতে ইসলামীর কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মুমদার শুধু হাসিনাই নন, ৪৫ জন নেতার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে হাসিনা ও তাঁর সহযোগিদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অবিলম্বে বাংলাদেশের হাতে হাসিনাকে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি-সহ একাধিক দল। কিন্তু এখনই হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করা হবে না বলেও জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। কখন তাঁকে ফেরত চাওয়া হবে সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাও জানিয়েছেন তিনি। ইউনুস বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তার বড় সব থেকে বড় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই মামলার রায় ঘোষণার পর হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলেও জানান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। ইউনুস বলেন, ভারতের সঙ্গে প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আমি মনে করি না যে রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে। এরই সঙ্গে ইউনুসের দাবি, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কোনও জায়গা হবে না।
অর্থাত্ সবমিলিয়ে এটা বোঝাই যাচ্ছে যে, হাসিনা ও তাঁর দলের ভবিতব্য ইউনুস বলে দিচ্ছেন এখনই। ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলেছেন কীভাবে হাসিনাকে বাগে আনবেন তিনি। প্রতিবেশী দেশে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক অটুট রাখতে পরিকল্পনাও সেরে ফেলেছেন মহম্মদ ইউনুস। এখন দেখার ইউনুস সরকারের এই ভবিষ্যতবাণী আদৌ সফল হয় কিনা।