পৌষালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঘুম উড়ল বাংলাদেশের। আশঙ্কাই হল সত্যি। নীল লালের দ্বৈরথে যখন ব্যস্ত ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টি। তখন বৈদেশির সম্পর্কের নানা সমীকরণ নিয়ে মাথা চুলকোচ্ছিল বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশগুলি। হিসেব কষে দেখছিল শেষ অঙ্কটা কার ঘরে বেশি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের দিকে নজর ছিল গোটা বিশ্বের। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিস নাকি রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। কে জিতবেন, সেদিকেই ছিল বিশ্ববাসীর নজর। মঙ্গলবার নির্বাচনের পর বুধবারই স্পষ্ট হল ফলাফল। সঙ্গে সঙ্গেই সংখ্যালঘু ইস্যুতে শঙ্কা আরও বাড়ল বাংলাদেশের অন্দরে।
ফের মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদের দায়িত্ব সামলাবার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ট্রাম্পের জয় যে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঐতিহাসিকভাবে সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে তেমন বিরাট পরিবর্তন না হলেও সে সম্ভবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না একেবারেই। বিশেষত ট্রাম্প যেভাবে বৈদেশিক নীতি নিয়ে বিচার বিবেচনা করেন, তাতে অনিশ্চতার জায়গা থেকেই যাচ্ছে।
সম্প্রতি ভোটের আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংখ্যা লঘু সংক্রান্ত একটি পোস্ট শঙ্কা জাগায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের মনে। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পোস্ট ভবিষ্যত্ নীতির জন্য ছিল না। বরং, নির্বাচনে হিন্দু ভোটার টানার রাজনৈতিক কৌশল ছিল।
এর পাল্টা জবাব দিতে অবশ্য ছাড়েনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলছেন, কিছু লবি গ্রুপই এটার প্রভাব ফেলতে চেয়েছে। সেই আলোকেই ট্রাম্পের এই বিবৃতি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লবি গ্রুপ বলতে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ অথবা ভারতের মোদী সরকারের কথাই বোঝানো হয়েছে। কারণ অগাস্ট মাসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোনালাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে উদ্বেগের কথা জানালেও সেটা খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। কারণ ক্ষমতায় তখনও ছিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। তবে রিপালিকান পার্টির ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে ফেরাই নতুন করে ঘুম উড়িয়েছে বাংলাদেশের। কারণ অতীতেও ট্রাম্প এবং মোদীর বরাবরের সুসম্পর্ক দেখে এসেছে বিশ্ব। দুজনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এতোটাই যে এবারের জয়ের পর ট্রাম্পকে মাই ফ্রেন্ড সম্বোধন করে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ট্রাম্পকেও বরাবরই মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায়। অন্যদিকে, মোদীও হলেন কট্টর হিন্দুপন্থী ভাবধারার ও ঈশ্বরে বিশ্বাসী মানুষ। দুই ডানপন্থী যখন বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে একসঙ্গে ছক কষবেন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে, তখন তারা অস্তিত্ব সংকটে ভুগবেন বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। অর্থাত্ আমেরিকার ধুরন্ধর বুদ্ধি ও ভারতের সমর্থন একত্রে বাংলাদেশের মতো দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্কে টলিয়ে দিতে পারে। বাধ সাধতে পারে কঠোর অভিবাসন নীতি। শঙ্কা রয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্যও। আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে রোহিঙ্গাদের। বিগত ১ দশক ধরে নানা উথ্থান পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক। শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পর সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করলেও ফের আগুনে ঘৃতাহুতি দেয় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্পের এক্স বার্তা। এবার জ্বলন্ত আগুন আরও তেজ পেল ট্রাম্পের জয়ে। যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সর্বসমক্ষে ভয় চোখে আনছে না। তবে চোখে শঙ্কা না থাকলেও মনে থাকছেই।