নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক ঃ ফের বদল হতে পারে উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস। চলতি বছর পরিবর্তন ঘটেছে উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাসের। দীর্ঘ ১৩ বছর পর পরিবর্তিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস। তবে এই সিলেবাস নিয়ে আপত্তি তুলেছে কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন। উচ্চমাধ্যমিকের কয়েকটি বিষয়ের বেশ কয়েকটি টপিক নিয়ে আপত্তি দেখিয়েছেন তারা। ঠিক কোন কোন বিষয় নিয়ে আপত্তি তা তারা জানিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে। এই নিয়ে তৎপর সংসদও। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, “মাননীয় চিরঞ্জীববাবু সিলেবাস পরিবর্তনের বিষয়ে স্পেসিফিক বিষয়গুলো জানতে চান। তাই সিলেবাস সম্পর্কে বিষয়গুলি সংসদ সভাপতিকে জানানো হয়েছে।” মূলত বাংলা, ইংরেজি ও ইতিহাস সম্পর্কে সাজেশন দেওয়া হয়েছে। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে যা জানানও হয়েছে-উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজি সিলেবাস পরিবর্তন বিষয়ে তাদের পরামর্শ, পুরনো সিলেবাসে ইংরেজি বিষয়ে ক্লাস ইলেভেনে সারা বছরের জন্য গদ্য ছিল পাঁচটি।
যাতে ‘নোবেল লেকচার’ ছিল ভীষণ বোরিং কিন্তু নিউ সিলেবাস – ২০২৪ এ ক্লাস ইলেভেনে দুটি সেমেস্টার মিলে সাতটি গদ্য রাখা হয়েছে। অর্থাৎ সিলেবাস বাড়িয়ে দেওয়া হলো। যা কিনা ছাত্রছাত্রীদের উপর অতিরিক্ত চাপ বলে মনে করছেন তারা । প্রথম সেমেস্টারে ‘দা স্বামী এন্ড মাদার ওরশিপ’ বাই সিস্টার নিবেদিতা – এত ভাব গম্ভীর আধ্যাত্মিক বিষয় যা কিনা ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝার ক্ষেত্রে বা বোঝানোর ক্ষেত্রে খুবই কঠিন । এই গদ্যটি অবশ্যই চেঞ্জ করা উচিত বলে মত তাঁদের । দ্বিতীয় সেমেস্টারে তিনটি খুব বড় বড় গদ্য রাখা হয়েছে এবং ‘অফ স্টাডিজ বাই বেকন’ রাখা হয়েছে। ‘অফ স্টাডিস’ ছোট হলেও ভীষণ নিরস ও কঠিন। ‘দ্য গার্ডেন পার্টি’ নতুন সংযোজন হলেও বড় ও রসকসহীন। আবার ‘নোবেল লেকচার বাই মাদার টেরেজা’ ভীষন একঘেঁয়ে। তাই ‘গার্ডেন পার্টি’ এবং ‘নোবেল লেকচার’ দুটোই চেঞ্জ করা দরকার। এই দুটির পরিবর্তে মনোগ্রোহী যে কোনো একটি ছোট গদ্য দেওয়া দরকার। একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমেস্টারে ‘মাই লাস্ট ডাচেস’ কবিতাটির পরিবর্তে ‘দা লিসনার্স’ বাই ওয়াল্টার ডিলামারের কবিতাটি সংযোজিত হলে ভালো হয় বলেও সংসদকে জানান তারা। পাশাপাশি একাদশ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে কোন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনার বিষয় না রাখাই ভালো। বিগত দিনেও তা ছিল। যে কোনো ধর্মীয় বিষয় না রেখে অন্য অনেক বিষয় রয়েছে সেরকম বিষয়ে প্রোজ রাখা হোক যা ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় হবে বলে মত তাদের। এছাড়াও দ্বাদশ শ্রেণিতে ‘তারা’ নাটকটি বাদ দেওয়া উচিত। কেননা এই বড় নাটকটি দুটি সেমেস্টারে ভাগ করে পড়ানোর কথা বলা হয়েছে। একই নাটক দুটি সেমেস্টারে ভাগ করে পড়ালে নাটকের সাজুজ্য বা গুরুত্ব থাকে না। এর পরিবর্তে আলাদাভাবে ছোট মনোগ্রাহী কোন নাটক দেওয়ার কথাও জানান তারা। এতে গেল ইংরেজি বিষয়। এবার উচ্চমাধ্যমিকে বাংলর সিলেবাস পরিবর্তন বিষয়ে শিক্ষক সংগঠনের পরামর্শ, সিলেবাস বিস্তৃত, নম্বর কম, পড়ানোর জন্য বরাদ্দ সময় আরও কম। সাহিত্য পড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ, রসগ্রাহী আলোচনা, গোত্র নির্ণয়, লেখক পরিচিতি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও তার জন্য যথেষ্ট সময় দরকার। ‘পুঁই মাচা’ ভালো গল্প কিন্তু প্রাসঙ্গিকতা মাঝারি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর ‘ডাইনি’ খুব ভালো একটি বিকল্প হতে পারে বলে মত তাঁদের। স্বল্প পরিসরে এমন গল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি দিতে হবে যাতে সাহিত্যের প্রতি ভালোলাগা, দারুণ প্রাসঙ্গিকতা, মূল্যবোধ, গভীর ভাবনা, বিজ্ঞান মনস্কতা , মুক্ত চিন্তন, লিঙ্গ সাম্য ইত্যাদি যুগোপযোগী বিষয় থাকে। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর গল্পের অনুবাদ হয়েছে আক্ষরিক, আক্ষরিক অনুবাদ নিকৃষ্ট হয়, এই কারণে সাহিত্য রস ক্ষুন্ন হয়েছে। রসানুবাদ প্রয়োজন। তাছাড়া ম্যাজিক রিয়ালিজম (আলোচ্য গল্পের গোত্র) একাদশের পাঠ্য হওয়ার যোগ্য নয় বলে মত তাঁদের। ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসের পাঠ্য বিষয় প্রচুর কিন্তু নম্বর অত্যন্ত কম। সেই কারণে প্রশ্ন করাটা প্রহসনে পরিণত হয়। একাদশ -দ্বাদশ শ্রেণিতে এত বিশদে পড়ানোর দরকার নেই বলে মত তাঁদের । যাঁরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে অনার্স পড়বেন তাঁদের শুধু কাজে লাগবে তাই সিলেবাস ছোট করার আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা। এছাড়াও বাংলা সিলেবাসে আরও একাধিক পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মত তাঁদের।
উচ্চমাধ্যমিকে ইতিহাসের সিলেবাস পরিবর্তনের বিষয়ে তাঁদের পরামর্শ, একেবারে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশের ঘটনার পরম্পরা আলোচনা থাকার ফলে তার কোন কূলকিনারা নেই। হাজার হাজার প্রশ্ন যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো ভাবে দেওয়া যেতে পারে। এটা কোনভাবেই বাস্তবসম্মত সিলেবাস হতে পারে না। যে সিলেবাস করা হয়েছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অনেক কিছুর সঙ্গে তার কোন যোগ নেই। নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কোন সময় কাল ধরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করার মতো বাস্তবসম্মত সিলেবাস করা দরকার বলে মত তাঁদের। ইতিমধ্যেই সংসদ এই বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করেছে। সূত্রের খবর, সিলেবাস কমিটির সঙ্গেও এনিয়ে কথা বলেছেন সংসদ সভাপতি। দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।