পৌষালী উকিল : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং পরবর্তীতে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত রাজনৈতিক সম্পর্ক অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে। হাসিনার দেশত্যাগ ও ভারতে আশ্রয়ের জেরে দুদেশের মধ্যে গত সাড়ে ১৫ বছরের ঘনিষ্ঠতার ছন্দপতন ঘটে। ঝিমিয়ে পড়া সেই সম্পর্ককে চাঙা করতে ও এই অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে এবার পা বাড়াতে চলেছে ২ দেশই। সম্প্রতি দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীদের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। এবার ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশ উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটি হবে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সরকারি বৈঠক।
এই বৈঠকে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ নিয়ে সরব হতে পারে। সে বিষয়ে উত্তর দিতে ইতিমধ্যেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ফেলেছে ভারত। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে হাসিনাকে দেশে ফেরানো ও হাসিনা সরকারের সব অপকর্মের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে আগামী মাসের এই আলোচনায় হাসিনার প্রত্যাপর্ণ ইস্যুতে বিশেষভাবে আলোচনার দাবি জানাতে পারে বাংলাদেশ। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি ও বাংলাদেশের বিদেশ সচিব জসিম উদ্দীন এই বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন বলেই সূত্রের খবর।
ডিসেম্বরের বৈঠকে দু-দেশের অমীমাংসিত ইস্যুগুলি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি উঠতে পারে ভিসা প্রসঙ্গও। ৫ অগাস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়াতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেয়। যদিও জরুরি মেডিক্যাল ভিসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞায় ছাড় থাকছে। বাংলাদেশ চাইছে নয়াদিল্লি দ্রুত ভিসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক করুক।
বৈঠকে একদিকে যেমন ভারতের কাছে একাধিক ইস্যুতে হাত পাততে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তেমন ঢাকার কাছেও হাত পাততে হবে নয়াদিল্লিকে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা থেকে বাংলাদেশে ভারতের প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত। প্রকল্পগুলি পুনরায় চালু করার আগে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ভারতীয়দের নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায় নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়েও সরব হবে ভারত।
হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশের বন্ধু সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস তো সেকথা বলেই দিয়েছেন। অন্যদিকে, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কথা অনুযায়ী, বাংলাদেশের এই মুহূর্তে কোনও প্রতিবেশী দেশই নেই। যদিও এমন প্রেক্ষাপটেও ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা এক আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক কোনও ঘটনাকে ঘিরে ওঠানামা করে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা উল্লেখ করেছেন, ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক নয়।
এখন দেখার এই বৈঠকের ফলে আদৌ ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে বরফ গলে কিনা।