মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ছাত্র আন্দোলনের চাপে দেশ ছেড়েছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর বাংলাদেশের টালমাটাল পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথগ্রহণ করেন নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুস। ১০০দিনের বেশি সময় পেরোলেও অশান্তির অবসান এখনও হল না সেদেশে। বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ সামনে এসেছে বাংলাদেশে। যদিও এই ইস্যুতে মহম্মদ ইউনুস সরকারের পাল্টা অভিযোগ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের সংখ্যালঘুবিষয়ক ফোরামের ১৭তম অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় সম্প্রীতির গৌরবজনক উদাহরণ তৈরি করেছে। রাষ্ট্রসংঘের সেই সম্মেলনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে দাবি করেন একাধিক এনজিও প্রতিনিধি। সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির প্রসঙ্গও তোলা হয় সেই সম্মেলনে। এই ইস্যুতে সেখানে উপস্থিত বাংলাদেশি প্রতিনিধির বক্তব্য , ‘ চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আবহে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কিছু ষড়যন্ত্রকারী মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। বিদেশি সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সরকার।
এদিকে বাংলাদেশে হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীকে অবিলম্বে মুক্তি না দিলে কড়া মূল্য চোকাতে হবে বাংলাদেশকে। রবিবারের মধ্যে কৃষ্ণদাস প্রভুকে মুক্তি না দিলে সোমবার পেট্রাপোল সীমান্ত অবরোধ করা হবে।
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, আমি গোটা ভারতবর্ষের ডাক্তার সমাজ, ভারতপ্রেমী নাগরিকদের, সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশিদের বয়কট করার জন্য অনুরোধ করব। বাংলাদেশের মৌলানা যদি বলতে পারেন, যে প্রামাণিক শীল, হিন্দু সম্প্রদায়ের নাপিতদের কাছে চুল দাঁড়ি কাটবেন না। মোদকদের কাছ থেকে মিষ্টি নেবেন না। আমিও এখান থেকে ভারতপ্রেমীদের বলতে চাই, কড়া উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে। এটা মুখে নয়, কার্যক্ষেত্রে করতে হবে। এমন উত্তর দিন, যাতে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, আলু ১২০ টাকা কেজি হয়। ১ হাজার টাকা লিটার হয় পেট্রোল। বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু আরও বলেন ফারাক্কার উপর দিয়ে বিদ্যুৎ না গেলে, বাংলাদেশের ৮০ ভাগ জায়গা এখুনি অন্ধকার হয়ে যাবে।
যদিও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের মুখে বাংলাদেশ নিয়ে আলাদাই সুর শোনা গেল। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারকেই নিতে হবে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক হয়েছে। ভারত সরকার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। আমরা লাগাতার বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দিলেও ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যে এখনই কোনও প্রভাব পড়ছে না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন রণধীর জয়সওয়াল। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য যেমন চলছিল তেমনই চলবে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নিয়ে যখন ভারত ও বাংলাদেশ দুই তরফেই প্রতিক্রিয়া আসছে, তখন তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা জনি মুর। তিনি বলেন, বর্তমান আমেরিকার সরকার বাংলাদেশের দিকে তেমনভাবে মনোযোগই দেয় না। আমেরিকার সরকার বদল হতে চলেছে। এই সরকারের বিদেশনীতি অনেক ভালো। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসছেন। আমেরিকান মূল্যবোধ নিয়ে তাঁর দল দেশের সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কাজ করবে। ট্রাম্পের এই দল ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে দেখবে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে ইউনুস সরকার উদ্যোগী হয় কিনা, ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করে কিনা, দুইদেশের বাণিজ্যে আদৌ কোনও প্রভাব পড়ে কিনা সেদিকেই নজর আন্তর্জাতিক মহলের।