মাম্পী রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশে একবছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১.১ শতাংশ মানুষ এমনই মনে করেন। সম্প্রতি ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার তত্ত্বাবধানে একটি সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভুত্থানের জেরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে হয়েছিল। আন্দোলনের আবহে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। যার প্রধান উপদেষ্টা হন মহম্মদ ইউনুস। সেই অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১০০দিন কেটেছে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনে কেমন আছেন বাংলাদেশের বাসিন্দারা, নতুন সরকারকে নিয়ে দেশের নাগরিকদের মতামত কী?
তা জানতে দেশব্যাপী একটি সমীক্ষা করে ভয়েস অব আমেরিকা। ১৩ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে এই সমীক্ষা সংগঠিত করা হয়। সমীক্ষা পরিচালনা করে ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অব আমেরিকার নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট প্রশ্নমালার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে সমীক্ষাটি হয়। ১৮ বছর এবং তার চেয়ে বেশি বয়স্ক এক হাজার মানুষের মধ্যে র্যা ন্ডম ডিজিটাল ডায়ালিং পদ্ধতিতে এই সমীক্ষাটি করা হয়। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের ২০১৭ সালে সর্বশেষ প্রকাশিত অফিসিয়াল টেলিফোন প্ল্যান থেকে বাংলাদেশের মোবাইল নম্বরগুলোর সম্ভাব্য সবধরনের কম্বিনেশন থেকে করা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড-এর নিজস্ব ডেটাবেস থেকে সমীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সমীক্ষা পরিচালনার কাজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের মাধ্যমে ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের ঢাকা অফিসের কল সেন্টার থেকে ফোন করা হয়।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৭.৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৫ শতাংশ নারী এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী জনগণের মধ্যে ৬০.৪ শতাংশ মানুষ শহরে বসবাস করেন। গ্রামে বসবাস করেন ৬১.৪ শতাংশ। তাঁরা সকলেই আগামী এক বছরের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সপক্ষে মতামত দিয়েছেন।তরুণদের মতামতের দিকে নজর রাখলে দেখা যাচ্ছে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ৬২.৪ শতাংশ এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান। ৩৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের ৫৯.৮ শতাংশ মানুষ একবছরে নির্বাচনের পক্ষে।
শহরাঞ্চলের ১৮.৯ শতাংশ ও গ্রামীণ এলাকার ১৮.৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে নির্বাচন চান। এর মধ্যে পুরুষ ২০.৩ শতাংশ ও নারী ১৭.১ শতাংশ। ১৫.২ শতাংশ ১৮ থেকে ৩৪ বছরের তরুণ এবং ২২.৪ শতাংশ ৩৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সের তরুণ মনে করেন দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন হওয়া উচিত।
১৮ মাসের মধ্যে আগামী নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন শহরের ১০.৩ শতাংশ, গ্রামের ৮ শতাংশ, ১২শতাংশ পুরুষ, ৫.২ শতাংশ নারী এবং ৮. ৬ শতাংশ তরুণ।৪ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন শহরের ৬.২ শতাংশ, গ্রামের ৫.৭ শতাংশ মানুষ, ৬.৯ শতাংশ পুরুষ, ৪.৮ শতাংশ নারী, ৭.৬শতাংশ তরুণ। ৩৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী ৪ শতাংশ মানুষ ৪ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পরে নির্বাচনের পক্ষে।
সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন হোক, মত ৬৫.৯ শতাংশের তারা জানাচ্ছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করতে চায়, তারপরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের বিচারবিভাগ, সংবিধান, অর্থনৈতিক খাত, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সংস্কার করেই নির্বাচন করা উচিত বলে মত তাঁদের।
নির্বাচন কমিশন সংস্কারের পক্ষে – ৯৬.৫ শতাংশ
পুলিশ সংস্কারের পক্ষে – ৯২.৩ শতাংশ
বিচার বিভাগ সংস্কারের পক্ষে – ৯৫.৩ শতাংশ
অর্থনৈতিক খাতে সংস্কারের পক্ষে – ৯৬.৪ শতাংশ
সংবিধান সংস্কারের পক্ষে – ৯২.৫ শতাংশ
শুধুমাত্র নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে ৩১.৯ শতাংশ মানুষ। ১.৬ শতাংশ উত্তরদাতা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেছেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠরা মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের ৫৮.৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার ভালেভাবে দেশ পরিচালনা করছে। যারা মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে দেশ শাসন খারাপ করছে, তাদের সংখ্যা ২০. ৪ শতাংশ। দুই সরকারকে প্রায় একইরকম বলেছেন ২০.১ শতাংশ মানুষ।