বছরের শেষে বা নতুন বছরে স্বপরিবার কলকাতার আশেপাশে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছেন। ভাবছেন এমন একটা জায়গায় যাবেন যেখানে নিছক আনন্দ নয় জ্ঞানও অর্জন করা যাবে। তাহলে ঘুরে আসুন এই কয়েকটি জায়গায়।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক: চলছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। অর্থাৎ ফেস্টিভ মুডে এখন বঙ্গবাসী তথা শহরবাসী। বছরের শেষে বা নতুন বছরে স্বপরিবার কলকাতার আশেপাশে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছেন। ভাবছেন এমন একটা জায়গায় যাবেন যেখানে নিছক আনন্দ নয় জ্ঞানও অর্জন করা যাবে। তহলে এই প্রতিবেদনে আপনাদের এমন কয়েকটি জায়গার কথা বলছি যেখানে ট্রামে বা বাসে চড়ে বাইরে বেরোনো তারসঙ্গে প্রকৃতি দেখার পাশাপাশি মিলবে অফুরন্ত জ্ঞান। চিড়িয়াখানা, যাদুঘর বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে যেমন আনদের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ আছে ছোটোদের। তেমনই এগুলোর বাইরেও কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকায় এমন কিছু ঘোরার জায়গা আছে যেখানে গেলে যেমন আনন্দ মিলবে, তেমনই অনেক কিছু শেখাও যাবে।
বাসে বা মেট্রো করে ধর্মতলা এলে দেখতে পাবেন ট্রাম মিউজিয়াম। ধর্মতলা ট্রাম ডিপোতে রয়েছে এই মিউজিয়ামটি। মিউজিয়ামের নাম স্মরণিকা। কলকাতায় প্রথম ট্রাম চালু হয় ১৮৭৩ সালে। প্রথমে ছিল ঘোড়ায় টানা ট্রাম। তারপর ১৯০২ সাল থেকে ট্রাম চালাতে বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়। ট্রামের বিবর্তনের ইতিহাস জানতে গেলে এই ছোট্ট মিউজিয়াম অনেকটাই সাহায্য করবে। বৃহস্পতিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য সব দিন খোলা। বেলা একটা থেকে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মিউজিয়াম। দু-কামরার এই ট্রামে রয়েছে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও। তাই বছর শেষে একবার অনন্ত স্বপরিবার ঘুরে আসতেই পারেন এই মিউজিয়াম।
ধর্মতলা ছাড়িয়ে যদি এক্সাইড মোড়ের দিকে যাওয়া হয় তাহলে শিশুদের জন্য মিলবে এক আদর্শ মিউজিয়াম। নেহরু চিলড্রেনস মিউজ়িয়াম। শিশুদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই মিউজিয়ামটি। শুধুমাত্র আনন্দ দেওয়ানো নয়। আনন্দের সঙ্গে নতুন কিছু শিক্ষা দেওয়া এই মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য । আর তাই শিশুদের উপযোগী করে এই মিউজিয়াম তৈরি করা হয়। এখানে খুদেদের মনোরঞ্জনের জন্য যেমন একাধিক দেশের রকমারি পুতুল রয়েছে তেমনই দেশ ও বিদেশের গাড়ীর রকম ফের দেখতে পাবে খুদেরা। মডেলের মাধ্যমে মহাভারত ও রামায়নের কাহিনিও এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এছড়া বিভিন্ন আকারের গণেশের দেখা মিলবে এখানে। যা ছোটোদের খুব ভালো লাগবে বলে মত মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের। সোম ও মঙ্গলবার বাদে অন্যান্য দিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মিউজ়িয়াম খোলা। মিউজিয়ামে প্রবেশমূল্য ছোটোদের জন্য ১০টাকা ও বড়দের জন্য ২০টাকা। বাস বা মেট্রো দুই পরিবহনের মাধ্যমেই এই মিউজিয়ামে আশা যাবে।
এরপর একটু যাওয়া যাক বাইপাসের দিকে। ইএম বাইপাস সংলগ্ মুকুন্দপুরে ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্স-এর নবনির্মিত ভবনটি তৈরি হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে, মিউজ়িয়াম ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স। যেটি মহাকাশ মিউজিয়াম নামেও পরিচিত। এই মিউজিয়ামে রয়েছে অফুরন্ত জ্ঞানের ভান্ডার। মহাকাশ সংক্রান্ত একাধিক জানতে পারা যাবে এই মিউজিয়াম থেকে। যেমন রাইট ব্রাদার্সের উড়োজাহাজের অবিকল প্রতিরূপ, চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষের পদার্পণ ঘটানো মহাকাশযান অ্যাপোলো ১১-র প্রতিরূপ-সহ অনেক কিছুই চাক্ষুষ করা যায় এখানে। বায়ুমণ্ডল ফুঁড়ে পৃথিবীতে এসে পড়া উল্কাপিণ্ডের অংশবিশেষ দেখার সুযোগ মিলবে এখানে। চাঁদের মাটি ছুঁয়ে দেখার সুযোগ যেমন মিলবে তেমনই মিলবে মঙ্গলের পাথরের দেখা মিলবে । এছাড়াও এই যাদুঘরে দেখার সুযোগ মিলবে এখনও পর্যন্ত যত বিজ্ঞানী মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণায় বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন তাঁদের সই এবং স্মারক। ২০২৩ সালে মিউজ়িয়ামটির উদ্বোধন করেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা। এই মিউজিয়ামটি যেতে গেলে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী মেট্রো স্টেশন নামতে হবে। সেখান থেকে হাঁটা পথে মিউজ়িয়ামটি। বুধবার ছাড়া অন্যান্য দিন সকাল ৯টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে যাদুঘর খোলা থাকবে।
যদি ইকোপার্ক বা নিকোপার্কের দিকে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা থাকে তাহলে একবার অনন্ত ঘুরে আশতেই পারেন এয়ারক্র্যাফট মিউজ়িয়াম। যদি সত্যিকারের যুদ্ধবিমান ঘুরে দেখতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে নিউটাউনের এই এয়ারক্র্যাফট মিউজ়িয়ামে। দেশে এই ধরনের সংগ্রহশালা রয়েছে মাত্র দু’টি। প্রথমটি বিশাখাপত্তনমে, দ্বিতীয়টি কলকাতায়। নিউটাউনের এই মিউজিয়ামে রাখা আছে ২৯ বছরের পুরনো অবসরপ্রাপ্ত যুদ্ধবিমান, টি-ইউ ১৪২। যেটি দৈর্ঘ্যে ৫৩ মিটার এবং প্রস্থে ৫০ মিটার বিমানটির ওজন ১৮৫ টন। ভারতীয় নৌসেনার তত্ত্বাবধানে সেটি তামিলনাড়ু থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সংগ্রহশালাটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রয়েছে হিডকো। নিউটাউন থানার পাশে ডিজে ব্লকে রয়েছে মিউজ়িয়ামটি। মিউজিয়ামটি যেতে গেলে ১ নম্বর এয়ারপোর্ট থেকে অথবা সেক্টর ফাইভ থেকে বাসে আসতে পারেন এই মিউজ়িয়ামে। সোমবার ছাড়া সব দিনই খোলা এই মিউজিয়াম। এছাড়াশনি এবং রবিবার দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মিউজ়িয়াম খোলা থাকে। অন্যান্য দিন দুপুর আড়াইটে থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই এবার বর্ষ শেষে বা নতুন বছরে একবার ঘুরে আসতেই পারেন এই মিউজিয়াম থেকে।
এবার একবার যাওয়া যাক হাওয়ার দিকে। কলকাতা সংলগ্ন একটি জেলা। হাওড়াব্রীজ এই জেলাটির সঙ্গে কলকাতার সংযোগ করেছে। এখানে গেলে দেখা মিলবে হাওড়া রেল মিউজ়িয়ামের। ভারতীয় রেলের বিবর্তনের সাক্ষী হাওড়ার স্টেশন লাগোয়া এই রেল মিউজিয়াম। যেখানে দেখা মিলবে পুরনো দিনের রেল ইঞ্জিন, কোচের। এই সব মডেলে সেজে উঠেছে হাওড়া রেল মিউজ়িয়াম। পুরনো দিনের সিনেমায় দেখা সেলুন কারেরও দেখা মিলবে এখানে। রয়েছে ভারতের প্রথম ব্রডগেজ় ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ, হারিয়ে যাওয়া স্টিম ইঞ্জিন, টয় ট্রেন থেকে দুষ্প্রাপ্য বিভিন্ন ছবি। এক কথায় বলা যায় এই মিউজিয়াম বা যাদুঘর গেলে প্রায় দেড় শতাব্দীর পুরনো ভারতীয় রেলের টুকরো টুকরো ইতিহাস জনাতে পারা যাবে।
পাশাপাশি টয়ট্রেন থেকে টিকিট কাউন্টার কেমন হয় তারও মডেল করা হয়েছে এই রেল মিউজিয়ামে। আর এই যাদুঘর খুদেদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সংলগ্ন চত্বরে রেল কোচেই রয়েছে রেস্তরাঁ। মিউজিয়াম ঘুরে যেখানে খাওয়া -দাওয়াও সারতে পারবেন। সোমবার ছাড়া প্রতি দিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই স্বপরিবার এই মিউজিয়াম থেকে ঘুরে আসার পরিকল্পনা করতেই পারেন।