ফের ইতিহাস গড়ল মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। বছর শেষে মহাকাশে আরও উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত স্যাটেলাইট পাঠালো এই গবেষণা সংস্থা। ৩০ ডিসেম্বর রাত ১০ টা নাগাদ শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টার এর সফল উৎক্ষেপণ হয়। ইসরোর বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য চন্দ্রযান-৪ এর চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে আনা ।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক: বছর শেষে ইসরোর নয়া মিশন। ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাত ১০টা বেজে ১৫ সেকেন্ডে IST-তে শ্রীহরিকোটা থেকে মহাকাশ যাত্রা করল ইসরোর PSLV-C60 রকেটটি। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিশন বলা চলে। জানা গেছে, এর সাহায্যে ইসরো অত্যাধুনিক মহাকাশ ডকিং প্রযুক্তি প্রদর্শন করতে চলেছে, যা ভবিষ্যতে বিভিন্ন মহাকাশ অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছের ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এই মিশনটির নাম দেওয়া হয়েছে স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট। যা মহাকাশে দুটি স্যাটেলাইটের মধ্যে রেনডেভুজ এবং ডকিং পরীক্ষা করবে। PSLV-C60 রকেটটি ইসরোর এমন একটি রকেট যা যে কোনও মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। দুটি স্যাটেলাইটের সহযোগিতায় মহাকাশে এই রকেটটি তার কাজ করতে পারবে। এই মিশনের মূল লক্ষ্য হল মহাকাশে একটি স্যাটেলাইট অন্য স্যাটেলাইটের কাছে পৌঁছে গিয়ে তা সংযুক্ত বা ডকিং করতে সক্ষম হবে কিনা তা পরীক্ষা করা। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এই ধরনের প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ইসরোর বিভিন্ন মহাকাশ মিশনে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে। বিশেষ করে চন্দ্রযান-৪ মিশনে চাঁদের মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহের সময় এবং ভারতীয় আন্তরিক্ষ স্টেশন তৈরি করা। এই সমস্ত কাজে বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠবে এই প্রযুক্তি বলে মত তাঁদের। এই মিশনে দুটি স্যাটেলাইট রয়েছে। প্রথমটি হল চেজার এবং দ্বিতীয়টি হল টার্গেট। চেজার স্যাটেলাইট টার্গেট ধরবে। যা দিয়ে ডকিং করা হবে। এর বাইরে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হতে পারে। স্যাটেলাইট থেকে। স্যাটেলাইটে একটি রোবোটিক বাহু রাখা হয়েছে। সেটি একটি হুকের মাধ্যমে লক্ষ্যকে নিজের দিকে টেনে নেবে। অর্থাৎ টেথারড পদ্ধতিতে। PSLV-C60 রকেটটি সঠিকভাবে দুটি স্যাটেলাইটকে মহাকাশে স্থাপন করবে। এই স্যাটেলাইট দুটি খুব কাছাকাছি, প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে অবস্থান করবে। এরপর চেজার স্যাটেলাইটটি ধীরে ধীরে টার্গেট স্যাটেলাইটটির কাছে পৌঁছে গিয়ে সংযুক্ত হবে বলে জানা গেছে। এই প্রক্রিয়া খুবই নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন বলে মত বিজ্ঞানীদের। ইসরো জানিয়েছে,তাদের লক্ষ্য চন্দ্রযান-৪ এর চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে আনা । এই উদ্দেশ্যে দু’টি রকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন মডিউল মহাকাশে পাঠানো হতে পারে । এগুলিকে পর্যায়ক্রমে পৃথিবী এবং চাঁদের কক্ষপথে ডকিং করা হবে ৷ ইসরো ডকিং প্রযুক্তিতে সফল হলে মহাকাশে ডকিং প্রযুক্তি প্রদর্শনকারী হিসেবে ভারত পৃথিবীর চতুর্থ দেশ হিসেবে স্থানাধিকার করবে। এর আগে, আমেরিকা, রাশিয়া, এবং চীন এই প্রযুক্তি সফলভাবে প্রদর্শন করেছে। ইসরোর মহাকাশ ডকিং প্রযুক্তি পরীক্ষার এই যাত্রা পৃথিবীকে নতুন এক দিগন্ত খুলে দেবে বলেও আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।