মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ৯ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বের অবসান। গদি ছাড়লেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। আসন্ন নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা থেকেই এই সিদ্ধান্ত বলে দাবি করা হয়েছে কানাডার সংবাদপত্র দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল-এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। তার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই ইস্তফা ঘোষণা করেন জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেছেন, “কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে চাই। আমার ইচ্ছের কথা আমি দল এবং গভর্নরকে জানিয়েছি। দল নতুন নেতা নির্বাচন করবে, তারপরই দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেব। চলতি বছরের শেষের দিকে নির্বাচন হবে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দল এবং কানাডাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নতুন নেতা খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত করা হচ্ছে”
কানাডার সংসদের রীতি অনুযায়ী এই পরিস্থিতে ক্ষমতাসীন দল পরবর্তী নেতা নির্বাচনের জন্য আগামী ৯০ দিন সময় পাবে।এই প্রসঙ্গে ট্রুথ সোশ্যালের একটি পোস্টে ট্রুডোকে কটাক্ষ করে ট্রাম্প লিখেছেন, “সচল থাকার জন্য বাণিজ্য শুল্ক ও ভর্তুকিতে কানাডার বিশাল ঘাটতি রয়েছে ৷ বছরের পর বছর সেই মাসুল গুনতে হচ্ছে আমেরিকাকে ৷ মার্কিন প্রশাসনের পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ জাস্টিন ট্রুডো বিষয়টি জেনে সময় বুঝে পদত্যাগ করলেন৷ আমেরিকার সঙ্গে কানাডা যুক্ত হয়ে গেলে শুল্কের বোঝা থাকবে না৷ করের পরিমাণ অনেক কমবে৷ শক্তিশালী হয়ে উঠবে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ চিন ও রুশ হানার আশঙ্কা থাকবে না ৷ কানাডার অধিকাংশ মানুষই মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন৷”
বিগত কয়েকদিন ধরে প্রায়ই ভারত বিরোধী মন্তব্য করে আসছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। কানাডার রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি তাঁর দলের অন্দরেও ট্রুডোর উপর চাপ বাড়ছিল। কানাডার মাটিতে খলিস্তানপন্থী হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড ঘিরে ভারতের দিকে আঙুল তুলেছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। ২০২০ সালেই খলিস্তানি নেতা নিজ্জরকে সন্ত্রাসবাসী ঘোষণা করেছিল ভারত। ২০২৩-এ কানাডায় একটি গুরুদ্বারের সামনে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে ভারতের ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করে বিতর্ক শুরু করেন ট্রুডো। তা নিয়ে দুদেশের সম্পর্কে চিড় ধরে। পাল্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেন, ভারত ভাগ করতে চাওয়া মৌলবাদী শক্তি খলিস্তানপন্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে কানাডা।পরবর্তীকালে ট্রুডোর আমলে কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। ভারতবিরোধী মনোভাবের জেরে তলানিতে চলে যায় নয়াদিল্লি-অটোয়া কূটনৈতির সম্পর্ক।
২০২৩ সালে বিভিন্ন নির্বাচনী সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, কানাডার অধিকাংশ বাসিন্দা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে অপছন্দ করেন। পরবর্তী নির্বাচনে কানাডায় কনজারভেটিভ দল ক্ষমতায় আসতে চলেছে বলে উঠে আসে বিভিন্ন সমীক্ষায়। এই আবহে হঠাৎই পদত্যাগ করেন কানাডার উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। তারপর দেশের প্রশাসনের প্রতি জনগণের অসন্তোষ আরও বাড়তে থাকে। মন্ত্রিসভায় রদবদল করেও সেই অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। জোট ভাঙার হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছে শরিক দলও। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা ঘোষণা করলেন জাস্টিন ট্রুডো।
এ দিকে আগামী চার বছরের জন্য কানাডার প্রতিবেশী আমেরিকার ক্ষমতায় বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রুডোকে গভর্নর বলে কটাক্ষ করেছিলেন ট্রাম্প। ফ্লোরিডার রিসর্ট মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর নৈশভোজের একটি ছবি প্রকাশ করে ট্রাম্প লেখেন, জাস্টিন ট্রুডো গ্রেট স্টেট অব কানাডার গভর্নর। মার-এ-লাগোতে ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন কানাডার ৫১তম মার্কিন স্টেট হওয়া উচিত। যদিও বিষয়টি ট্রাম্প মজা করে বলেছেন বলে জানিয়েছিলেন কানাডার জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডমিনিক লেব্লাঙ্ক। লেব্লাঙ্ক বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের সঙ্গে এমনিই মজা করেছেন, যা কোনভাবেই গুরুতর মন্তব্য নয়।
ট্রাম্পের অতি ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ইলন মাস্কও জাস্টিন ট্রুডোকে নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছিলেন, আগামী নির্বাচনেই নতুন প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে কানাডা। ট্রুডো আর ফিরবেন না। ইলন মাস্কের সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য়ি হল। ২০১৩ সালে কানাডার পার্লামেন্টে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছিল লিবারেল পার্টি। তখনই দলের রাশ হাতে নেন জাস্টিন ট্রুডো। ২০১৫ সালের নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় ফেরান তিনি। এহেন জাস্টিন ট্রুডো প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেন। এখন প্রশ্ন হল ট্রুডোর উত্তরসূরী কে হচ্ছেন?
কানাডার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, কানাডার রাজনীতিতে প্রভাবশালী অনিতা আনন্দ। পরিবহণ দফতরের পাশাপাশি জনসেবা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, কোষাগার বোর্ডের দায়িত্বেও কাজ সামলেছেন তিনি। ৫৭ বছরের অনিতা অক্সফোর্ডের পড়ুয়া। অনিতার বাবা তামিল এবং মা পাঞ্জাবি। অনিতার পাশাপাশি কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন মেলাইন জলি, ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, মার্ক কার্নি, ফ্রাঙ্কোইস-ফিলিপ শ্যাম্পেন সহ বেশ কয়েকজন। এখন কে কে বসেন কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসনে, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।