মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অবশেষে বাংলাদেশের জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ৪ মে বাংলাদেশে আসার তারিখ থেকে তাঁকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত ওই গেজেট বিবৃতিতে বলা হয়- গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হল। ২০২৪-এর ৫ ডিসেম্বর, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
কারার ওই লৌহ কপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট- এই গানটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অনুঘটকের মতো কাজ করেছিল।
১৯২১ সালে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় ফিরে গানটি লিখেছিলেন তিনি। স্বাধীনতা আন্দোলন, বিদ্রোহের আগুনে জল ঢালতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে জেলে আটকে রেখেছিল ইংরেজ শাসক। ঠিক সেই সময়েই বিপ্লবীদের রক্ত গরম করে দিয়েছিল কাজী নজরুল ইসলামের এই গান। কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য। জাতীয় পর্যায়েও তা স্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা ছিল যে, নজরুল ইসলামের ঢাকায় আগমনের তারিখ থেকে তাঁকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে সরকারি বিবৃতি জারি করা হোক। বাংলাদেশবাসীর সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
১৯৭২ সালের ২৪ মে, কাজী নজরুল ইসলামকে কলকাতা থেকে সরকারি উদ্যোগে সপরিবারে ঢাকায় আনা হয়। তাঁর বসবাসের জন্য ধানমণ্ডির ২৮ নম্বর সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ করা হয়। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মানসূচক পদক হিসেবে পরিচিত।
১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামকে ডি.লিট উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে এক সমাবর্তন উৎসবে এই উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অসুস্থতার কারণে নজরুলকে ওই উৎসবে আনা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গভবনের একটি অনুষ্ঠানে নজরুলকে ডি. লিট উপাধি প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহ। ১৯৭৬ সালের ২৯ অগাস্ট ঢাকায় প্রয়াত হন কাজী নজরুল ইসলাম। কবি লিখেছিলেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’। তাঁর ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর শোকসভাতেও ১০ হাজারের বেশি মানুষ শরিক হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ২ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে সম্বোধন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ জারি করা হয়। কাজী নজরুল ইসলামকে সমস্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে কোনও গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। অবশেষে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হল।