মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নিজের ইস্তফা ঘোষণা করে কি সত্যি কি মহান হয়ে গেলেন ট্রুডো?
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা ঘোষণা করে দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। ভারতবিরোধী সুর তুলেই কি এই পরিণতি হল ট্রুডোর ?
গত ১০ বছরে কানাডাকে শুধুমাত্র ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন ট্রুডো। অথচ কানাডা এমন একটি দেশ, যার কাছে প্রাকৃতিক সম্পদের কোনও অভাব নেই। জনসংখ্যাও খুব বেশি নয়। ২০২৩-এ কানাডার জনগণনায় দেখা গিয়েছে, সেদেশের জনসংখ্যা ৪.১ কোটি। কানাডার বাসিন্দারাও উচ্চশিক্ষিত। এমন একটি দেশে মাদকাসক্তদের সংখ্যা মারাত্মক বেড়ে গিয়েছে। কেউ নিজেদের আয়ের টাকায় বাড়ি কিনতে পারেন না। এখানেই শেষ নয়, কয়েক দশক পুরনো বন্ধু আমেরিকাও হুমকি দিচ্ছে আমেরিকাকে। এত খারাপ কী করে হল কানাডার অবস্থা ? কেন ইস্তফা ঘোষণা করলেন ট্রুডো ? তাহলে কি কানাডার মঙ্গলের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রুডো ?
উত্তর হল না। তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। কারণ এটাই তাঁর কাছে সহজ পথ মনে হয়েছে। শুধুমাত্র বিরোধীরা নয়, তাঁর লিবারাল দলের এমপিরাই চাইছিলেন যে ট্রুডো ইস্তফা দিন। লিবারালের কাছে হাউস অফ কমন্স বা পার্লামেন্টে লিবারালের ১৫৩টি আসন ছিল। এর মধ্যে ১৩১জন এমপি তাঁর উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। অর্থাৎ ৮৬ শতাংশ এমপি ট্রুডোর উপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর লিবারাল পার্টির সদস্যরাই বিশ্বাস করেন যে, ট্রুডো ভালো নেতা নন।
ট্রুডোর পার্টিকে সমর্থন দিয়েছিল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি। যে দলের নেতা জগমিত সিং প্রকাশ্যে খলিস্তানিদের সমর্থন করেন। তাঁকে হাতে রাখতেই খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনায় ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়ান ট্রুডো। যদিও ঘটনায় ভারত নিজ্জরকে খুন করিয়েছে, সে কথাও প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। সবচেয়ে লজ্জার বিষয় হল, যার জন্য ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললেন, সেই জগমিত সিং বলেন, জাস্টিন ট্রুডোর লিবারাল কানাডিয়ানদের একেবারে নীচে নামিয়ে দিয়েছে। কানাডার অর্থনীতির পাশাপাশি ট্রুডোর রেটিংও একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। ১৯৮৪ থেকে বর্তমান পর্যন্ত কানাডার সবচেয়ে খারাপ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো।কানাডায় সরকার গঠনের জন্য ১৭২টি আসনের প্রয়োজন।আগামীদিন ভোট হলে কনজারভেটিভ পার্টি পেতে পারে ২৩৬টি আসন।ট্রুডোর হাতে রয়েছেন ১৫৩জন এমপি। আগামীদিনে লিবারাল পার্টির আসন কমে হতে পারে মাত্র ৩৫।অর্থাৎ আগামীদিনে খুব খারাপভাবে হারতে চলেছেন ট্রুডো।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে কানাডার সমস্যা আরও বাড়বে। সেই আশঙ্কা আগেই ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরই আশঙ্কা আরও বাড়তে থাকে ট্রুডোর। ট্রাম্প তো ইতিমধ্যেই কানাডাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার কথা এবং ট্রুডোকে গর্ভনর বলে কটাক্ষ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে ইস্তফা ঘোষণা করেন জাস্টিন ট্রুডো।ট্রুডো ঘোষণা করেন, তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন। পার্টি পরবর্তী নেতা বেছে নেবে। অর্থাৎ ২৭ জানুয়ারি পার্লামেন্ট সেশন শুরু হলে ওইসময় বেশিরভাগ পার্টি ট্রুডোর উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিত। ফলে এমনিতেও মুখ থুবড়ে পড়ত ট্রুডোর লিবারাল পার্টি। কিন্তু ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট সেশন সাসপেন্ড করে দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। ফলে সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টিও থাকছে না। ফলে জাস্টিন ট্রুডো অন্তত ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রাইম মিনিস্টার থাকছেন। ফলে ইতিহাসে তাঁর মহান ছবি বজায় থাকল। যে পার্টির মঙ্গলের জন্যই সরে দাঁড়ালেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসনের উপর তাঁর কোনও মোহ নেই- এটাই বোঝাতে চাইলেন ট্রুডো।
এদিকে ট্রাম্প ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন যে কানাডার আমেরিকাকে দরকার, কিন্তু আমেরিকার কানাডাকে প্রয়োজন নেই। তাহলে কানাডাকে বাঁচানোর জন্য কেন খরচ করবে আমেরিকা? কানাডার সামগ্রিতে ২৫% ট্যারিফ বসানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ট্রাম্প। ২৮জানুয়ারি ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসনে বসবেন।
এদিকে ২০জানুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত কানাডার পার্লামেন্টও শুরু হবে না। অর্থাৎ আমেরিকা কানাডার উপর ট্যারিফ চাপালেও কানাডার উপর প্রভাব পড়বে। অথচ তার প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করার জন্য কানাডার পার্লামেন্ট খোলা থাকবে না। যার ফল ভোগ করতে হবে কানাডাবাসীকে। অর্থাৎ কানাডাবাসীকে কার্যত দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিলেন ট্রুডো। শুধুমাত্র নিজের ইমেজ বাঁচানোর জন্য!এখানেই শেষ নয় এবছর কানাডার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এবছর কানাডায় ভোট আছে। এবছরই জুনে জি-৭ এ সভাপতিত্ব করতে চলেছে কানাডা।
গত বাজেটে চোখ রাখলে দেখা যায় , ১০বছর আগে কানাডার বাজেট ডেফিসিট ছিল প্রায় ৫বিলিয়ন ডলার। সেই সংখ্যা বর্তমানে ৫০বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেননি ট্রুডো।
একজন পাইলট বা জাহাজের ক্যাপ্টেন কখনও তাঁর যাত্রীদের সমস্যায় ফেলে নিজের প্রাণ বাঁচানোর কথা ভাবেন না। কিন্তু ট্রুডো এমন একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যিনি দায় সেরে নিজেই সরে গেলেন। কানাডাবাসী সমস্যায় পড়লে দায় তাঁর নয় তাও বুঝিয়ে দিলেন ট্রুডো।এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেল জাস্টিন ট্রুডো ঠিক কেমন প্রাইম মিনিস্টার ছিলেন?