কী হয়েছে লরেন পাওয়েলের ?
সুদূর আমেরিকা থেকে হঠাৎ কুম্ভে কেন গেলেন স্টিভ জবসের স্ত্রী ?
মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মহাকুম্ভে যোগ দিতে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন প্রয়াত অ্যাপেল স্রষ্টা স্টিভ জবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল। কুম্ভমেলার দ্বিতীয় দিনেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। তাঁর সারা গায়ে অ্যালার্জি বেরিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তার পরও লরেন গঙ্গায় ডুব দিতে চেয়েছেন তিনি। লরেনের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন তাঁর সহযোগীরা।রবিবার বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর, সোমবার মহাকুম্ভে পৌঁছন লরেন। এবারের কুম্ভমেলায় ১৪৪ বছর পর মহাযোগ রয়েছে। তাই কুম্ভমেলায় অংশ নিতে সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছেন লরেন।
আধ্যাত্মিকতার পথে লরেনের এই যাত্রা প্রথম নয়। চিরকালই ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের আধ্যাত্মিকতার পথে হাঁটতে চেয়েছেন তিনি৷ গুরু কৈলাসানন্দ গিরির হাত ধরে আধ্যাত্মিকতার ব্রতী হয়েছেন লরেন। লরেন জোবসকে নতুন নামও দিয়েছেন গুরু কৈলাসানন্দ। লরেন জোবলের নতুন নাম কমলা। গুরু কৈলাসানন্দ গিরি জানিয়েছেন, কমলাকে তিনি তাঁর গোত্রও দেবেন। কমলা সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতে এসেছেন ৷ তাঁর এই ব্রতী হওয়া বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্ম এবং ভারতীয় সংস্কৃতির গুরুত্বকে তুলে ধরবে।
কে এই স্বামী কৈলাসানন্দ ?
স্বামী কৈলাসানন্দ গিরি হিন্দু আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ১৩টি প্রধান আখাড়ার মধ্যে দেরাদুনের নিরঞ্জনী আখাড়ার আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর এবং নিরঞ্জন পীঠধীশ্বরের পদে রয়েছেন। তিনি আখাড়ার আধ্যাত্মিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন৷ অগণিত ভক্তকে পথ দেখান তিনি৷ কৈলাসানন্দ গিরি ২০২১ সালে নিরঞ্জনী আখাড়ার আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর পদে বসেন৷
১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি, বিহারের জামুইতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম কৈলাসানন্দ গিরির৷ অল্প বয়সেই বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি৷ ভক্তি ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন স্বামী কৈলাসানন্দ। পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, সংসার ত্যাগ করে ঈশ্বরের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন৷ আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর উপাধি অর্জনের জন্য কঠোর সাধনাও করেছেন৷
কৈলাসানন্দের তপস্যা
হরিদ্বারের চণ্ডীঘাটে কালী মন্দিরের প্রধান হিসাবে কঠোর তপস্যা করেন স্বামী কৈলাসানন্দ৷ নবরাত্রিতে ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকেন তিনি৷ তাঁকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত পৌঁছন। আধ্যাত্মিক বিষয়ে তাঁর জ্ঞান প্রচুর। হরিদ্বারের বাইরে এমনকি ভারতবর্ষের বাইরেও লক্ষ লক্ষ ভক্ত রয়েছে তাঁর।
অ্যাপস স্রষ্টা স্টিভ জবসের স্ত্রীও তাঁদের মধ্যে অন্যতম। লরেনের আগে আধ্যাত্মিকতার স্বাদ পেতে ভারতে এসেছেন স্টিভ জবসও। নিম করোলী বাবার ভক্ত ছিলেন তিনি। গুরু হিসেবে মানতেন তাঁকে। নৈনিতালের কঞ্চীধামেও গিয়েছিলেন।এবার আসা যাক কুম্ভমেলার প্রসঙ্গে। ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে কুম্ভমেলা। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে এবারের কুম্ভমেলা। প্রচুর পুণ্যার্থী এবং সাধুসন্তরা ভিড় জমিয়েছেন। একাধিক হিন্দি ছবিতে উঠে এসেছে কুম্ভমেলার প্রসঙ্গ। কুম্ভমেলায় দুই ভাইয়ের হারিয়ে যাওয়ার গল্পও সেইসব সিনেমায় উঠে এসেছে। যা এটাই প্রমাণ করে প্রচুর ভিড়ে ঠাসা হয় এই কুম্ভমেলা। কিন্তু আসলে কুম্ভের অর্থ কী ?
সংস্কৃত কথা কুম্ভের অর্থ কলস। যে কলসের মুখকে ভগবান বিষ্ণুরূপে গণ্য করা হয়। কলসের উপরের ভাগকে রুদ্র, আধারকে ব্রহ্মা, মাঝের অংশকে সমস্ত দেবী এবং কলসের ভিতরে থাকা জলকে সম্পূর্ণ সাগর হিসেবে গণ্য করা যায়। কুম্ভ সনাতন সংস্কৃতির আধ্যাত্মিক সমাগম। শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক নয়, বৈজ্ঞানিক তাৎপর্যও রয়েছে এই কুম্ভমেলার। গ্রহরাজ বৃহস্পতির সূর্যের চারপাশে একবার প্রদক্ষিণ করতে ১২বছর সময় লাগে। এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে জল হাওয়ায়। ওইসময় প্রয়াগরাজে তিন নদীর সঙ্গমে স্নান করাটা পবিত্র হিসেবে মনে করা যায়। বৃহস্পতি গ্রহ জ্ঞান ও আধ্যাত্মের প্রতীক। যখন বৃহস্পতি ১২বছর ধরে প্রদক্ষিণের পর কুম্ভরাশিতে প্রবেশ করে, তখনই হয় মহাকুম্ভ হয়। দেশে কুম্ভমেলার আয়োজন ৪ বছরে ১ বার। অর্ধকুম্ভের আয়োজন ৬ বছরে ১ বার এবং মহাকুম্ভের আয়োজন ১২বছরে এবার করা হয়। এই ধার্মিক আয়োজনের সাক্ষী হতে দেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও অসংখ্য মানুষ ছুটে যান কুম্ভমেলায়। সেজন্যই কুম্ভমেলার আয়োজনও হয় বিশাল। একঝলকে দেখে নেওয়া যাক এবারের কুম্ভমেলায় কী কী আয়োজন করেছে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার।
১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে মহাকুম্ভমেলা। মোট ৪৫দিন ধরে চলবে মেলা
এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৪০কোটির বেশি পুণ্যার্থী আসবেন
যা আমেরিকার জনসংখ্যার চেয়েও ৬কোটি বেশি
প্রয়াগরাজে দেড় লক্ষ তাঁবু বানানো হয়েছে
১২কিলোমিটার অস্থায়ী ঘাট তৈরি করা হয়েছে, যেখানে পুণ্যার্থীরা স্নান করবেন
১৮০০ একরের বেশি জায়গায় পার্কিং তৈরি করা হয়েছে
দেড় লক্ষ অস্থায়ী শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে
২৫ হাজার ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে
১৫ হাজার সাফাইকর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে
৬৯হাজার এলইডি লাইট লাগানো হয়েছে
৪০০কিলোমিটার অস্থায়ী রাস্তা এবং হাঁটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে
২ লক্ষ ৬৯ হাজার একর রাস্তায় হাঁটার জন্য শিট বিছানো হয়েছে,
যাতে পুণ্যার্থীদের হাঁটতে অসুবিধা না হয়
৩০ টি অস্থায়ী পুল বানানো হয়েছে
২০১টি রাস্তা চওড়া করা হয়েছে
২৬০০-র বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে
রয়েছে এআই ক্যামেরাও।খোলা হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম, যেখান থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছে এর থেকেই স্পষ্ট যে এবারের মহাকুম্ভ মেলার আয়োজন ঠিক কত বড়ভাবে করা হয়েছে। প্রশাসনের এই উদ্যোগে খুশি পুণ্যার্থীরাও।