মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০২৪-এর অগাস্টে ছাত্র আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন শেখ হাসিনা। তারপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়ে ক্ষমতায় আসেন মহম্মদ ইউনুস। ৫মাস কাটতে না কাটতেই এবার ইউনুসের বিরুদ্ধে অসন্তোষের আগুন জ্বলছে বাংলাদেশে। এবার ইউনুসের পদত্যাগ চেয়ে পথে নামছে আওয়ামি লিগ। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে সরকার ফেলতে হবে। এই দাবিতে ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে শেখ হাসিনার দল। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আওয়ামী লিগের সেই কর্মসূচি-
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সূচি-
১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি,বুধবার: লিফলেট বিলি
৬ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার : প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ
১০ ফেব্রুয়ারি, সোমবার : বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ
১৬ ফেব্রুয়ারি, রবিবার: অবরোধ কর্মসূচি
১৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার: দেশব্যাপী সকাল-সন্ধে সর্বাত্মক কঠোর হরতাল
হিন্দু সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, মন্দিরে ভাঙচুর, সাহিত্যিক, আইনজীবী, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ মামলা দায়েরের প্রতিবাদ জানিয়েই এই কর্মসূচি তাদের। দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের কর্মসূচিতে বাধা দিতে এলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে শেখ হাসিনার দল ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ইউনুস সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তাদের আগে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। ততদিন কোনও কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না। এটা সরকারের স্পষ্ট অবস্থান।
এদিকে আওয়ামী লিগের এই কর্মসূচি ঘোষণার পরেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে সাড়া পড়ে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের ভাবমূর্তি ৬মাসেই তলানিতে পৌঁছেছে। জামায়াতে ইসলামির সহযোগিতা নিয়ে তারা এখন নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির চেষ্টা করছে। জামায়াত অন্য ইসলামি দলগুলিকে একত্র করে আওয়ামী লিগ ও বিএনপির প্রতিপক্ষ একটি ইসলামি জোট তৈরি করছে। এ জন্য সংস্কারের যুক্তি তুলে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে রয়েছে তারা। সরকার সমর্থক প্রধান বিএনপি আবার অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে ভোটের ঘোষণার দাবিতে সরব হয়েছে তারা। এ জন্য তারা মাঠে নেমে আন্দোলনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে দলটির কোনো সক্রিয় কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়নি। দলের প্রধান নেতা-কর্মীর বেশিরভাগই দেশের বাইরে আছেন, কেউ আতঙ্কে পলাতক। বেশ কয়েকজন নেতা একাধিক মামলায় আটক হয়ে কারাগারে বন্দি। দলের কয়েকজন নেতাকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বিবৃতি দিতে দেখা গেলেও, দলের কোনো নেতৃত্ব বা কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। এমনকি ঢাকায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানেই রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি হত্যা, গণহত্যা, গুম ও নির্যাতন সহ একাধিক মামলা করা হয়েছে। এইসব মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় ‘পলাতক’ ঘোষণা করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তার প্রত্যর্পণের জন্য গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে।
দলের এই দুরাবস্থায় ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বাস্তবায়ন কিছুটা অবাস্তব বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে গত ১০ নভেম্বর রাস্তায় নামার ঘোষণা করেও নামতে পারেনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ফেসবুকে পেজ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, “দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এ সকল কর্মসূচিতে কোনো প্রকার বাধা প্রদান করা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।” এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লিগ কতটা শক্তি প্রদর্শন করতে পারে, তাতে ইউনুস সরকারের উপর কোনও প্রভাব পড়ে কিনা সেটাই এখন দেখার।