সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- কুম্ভর পুণ্যস্নান কাল হয়েছে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে কুম্ভকে কেন্দ্র করে। নয়াদিল্লি স্টেশনে ট্রেনে ওঠা নিয়ে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুসংখ্যা ১৮। এই ঘটনায় তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুর্ঘটনার পর থেকেই অভিযোগের তীর ওঠে রেলের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ ঝেড়ে ফেলারও চেষ্টা করে চলে রেল কর্তৃপক্ষ। তদন্তে জানা গেছে, দুর্ঘটনার দিন মাত্র ২ ঘণ্টায় বিপুল সংখ্যক জেনারেল টিকিট বিক্রি করা হয়। দুর্ঘটনার সময় প্ল্যাটফর্মে ছিল কয়েক জন মাত্র নিরাপত্তারক্ষী। শেষ মুহূর্তে কুম্ভগামী ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম বদল না হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলেই মনে করা হচ্ছে। ওই দিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৮টার মধ্যে ৯৬০০ টি জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছিল। সারাদিনে জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৫৪ হাজারেরও বেশি। রেলের দাবি, ঘটনার দিন বিক্রি হওয়া জেনারেল টিকিটের তুলনায় প্ল্যাটফর্মে যাত্রী সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি ছিল। কুম্ভ চলায় তীর্থযাত্রীদের টিকিট পরীক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল করা হয়। ফলে কুম্ভ চলাকালীন বিনা টিকিটে যাত্রী সংখ্যা প্রত্যেক দিনই বেশি থাকে। দুর্ঘটনার সময় কয়েক হাজার কুম্ভগামী যাত্রী স্টেশনে ছিলেন অর্থাৎ ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ওই সময় মাত্র ৬০ জন আরপিএফ এবং মাত্র ২০ জন দিল্লি পুলিশ কর্মী ছিলেন। এর আগেও দেখা গেছে, ২০০৪ এবং ২০১০ সালের কুম্ভমেলার সময় নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ছট পুজো, হোলি বা দিওয়ালির সময় নয়াদিল্লি স্টেশনে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে কুম্ভমেলার মতো বড় উৎসবে কেন স্টেশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী ছিল না তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। মাত্রাতিরিক্ত জেনারেল টিকিট বিক্রি হওয়ার পরেও কেন রেলের তরফে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীদের সতর্ক করা হল না! অস্বাভাবিক হারে জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছে, এই বিষয়েও কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি দিল্লি পুলিশকে। নয়াদিল্লি স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ওই দিন একদম শেষ মুহূর্তে কুম্ভগামী স্পেশাল ট্রেন ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বদলে অন্য প্ল্যাটফর্মে ঘোষণা করাতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। নির্ধারিত স্টেশন থেকে ট্রেনের রুট পরিবর্তন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা স্টেশন মাস্টারের রয়েছে। ঘটনার দিন রাত ০৮.০৫ এর শিবগঙ্গা এক্সপ্রেসে উঠতে পারেননি বহু যাত্রী। যা ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা উঠতে পারেননি তাঁরা ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মেই অপেক্ষা করছিলেন। এরপরই ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রাত ৯.০৫ এর মগধ এক্সপ্রেসে ওঠার চেষ্টা চালায় কুম্ভগামী পুণ্যার্থীরা। এরপর রাত ৮:৫০ এর ট্রেনের ঘোষণা করা হয়। ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি প্রয়াগরাজগামী স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে জানানো হয়। এরপর ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ভিড় জমাতে শুরু করেন পুণ্যার্থীরা। ঠিক তারপরে হঠাৎ করেই ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওই স্পেশাল ট্রেনটি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। ১২-১৩ এবং ১৪-১৫ নম্বর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা কুম্ভগামী যাত্রীরা দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে দৌড়তে থাকে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র সেনানী এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী লেট থাকায় ওই ২ ট্রেনের যাত্রীরাও সেই সময় স্টেশনে ঢুকছিল। সেই সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। তদন্তে দেখা গেছে, ১২ বা ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কুম্ভগামী ট্রেনটি ঢোকালে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটত না।