মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ প্রায় ৪০০ ট্রেনি কর্মীকে ছাঁটাই করল নামি বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস। মাইসুরু ক্যাম্পাসে ওই ফ্রেশার্সদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তারপর ৩বারের চেষ্টাতেও তাঁরা ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্টে উত্তীর্ণ না হতে পারায় তাঁদেরকে ছাঁটাই করা হয় বলে জানানো হয়েছে ইনফোসিসের তরফে। এখানেই শেষ নয়, ফ্রেশার্সদের ভয় দেখাতে বাউন্সার ও নিরাপত্তারক্ষীদেরও মোতায়েন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। আইটি কর্মী ইউনিয়ন নিটসের দাবি, ওই কর্মীদের ভয় দেখানোর কৌশলও ব্যবহার করেছিল ইনফোসিস। কর্মচারীদের ভয় দেখাতে বাউন্সার এবং নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করে রাখা হয়েছিল। কর্মচারীদের মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। সেই পরিস্থিতিতে ওই ঘটনার ভিডিয়ো দেখিয়ে কারোর থেকে সাহায্য চাওয়ার সুযোগও পাননি ওই অসহায় কর্মীরা। সেই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের কাছে সরকারিভাবে অভিযোগ দায়ের করার হুমকি দেওয়া হয়েছে আইটি কর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে।
ইনফোসিসের দাবি, কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী সব ট্রেনি কর্মীকে তিনবারের প্রচেষ্টায় অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন পরীক্ষায় পাস করতে হয়। গত দু দশক ধরে এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। কোম্পানির গ্রাহকদের যাতে দক্ষ কর্মীরা সাহায্য করতে পারেন, সে জন্যই এমন নিয়ম। এতে কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি পান এবং গ্রাহকরাও খুশি হন।
অন্যদিকে আইটি কর্মী ইউনিয়ন নিটসের দাবি করেছে, যে পরিমাণ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে, তার সংখ্যাটা ইনফোসিসের দাবি করা সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। যে সংখ্যাটা ৭০০-র নীচে হবে না বলে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মচারীদের ইউনিয়নের তরফে দাবি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকে অভিযোগের হুমকি দিয়েছে আইটি কর্মী ইউনিয়ন। নিটসের দাবি যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে, তারা দুবছর আগে অফার লেটার পেয়েছিলেন। দীর্ঘ দুবছর অপেক্ষার পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইনফোসিসে কাজ শুরু করেন তাঁরা। নিটসের প্রচেষ্টার পরই অক্টোবরে নিয়োগ করা হয়েছিল। এতদিনের অপেক্ষার পর যাও বা নিয়োগ করা হল, তারপর ফের তাদের ফের ছাঁটাই করে দেওয়া মোটেও কাম্য নয়।
জানা গিয়েছে, মাইসোর ক্যাম্পাসে ওই ৩০০ জনকে ডাকা হয় এবং মিউচুয়াল রেজিগনেশন দিতে বাধ্য করা হয়। একপ্রকার জোর করেই তাঁদের দিয়ে এই কাজ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে নিটস। তাই ইনফোসিসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে আইটি কর্মী ইউনিয়ন।
যদিও ইনফোসিস দাবি করেছে, অভ্যন্তরীন পরীক্ষার বিষয়টি তারা নিয়োগের সময়েই চিঠিতে উল্লেখ করে দেয়। ৩ বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তাতে উত্তীর্ণ হতে না পারলে ছাঁটাইয়ের কথাও উল্লেখ করা থাকে ওই চিঠিতে।
কয়েকদিন আগে দেশে কর্মসংস্কৃতির হাল ফেরাতে তরুণ-তরণীদের সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রাক্তন ইনফোসিস কর্তা নারায়ণমূর্তি। তিনি বলেন, আমি সকাল ৬টা ২০ মিনিটে অফিসে যেতাম। আর বেরোতাম সন্ধ্যা সাড়ে আটটায়। আর চল্লিশ বছর ধরে এটা করে গিয়েছি আমি। তাই কেউ বলতে পারবেন না এটা ভুল। এগুলো ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার। আর এই নিয়ে বিতর্ক বা আলোচনারও কিছু নেই। তবে নায়ারণমূর্তির ৭০ঘণ্টা কাজের পরামর্শ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। তাঁর মন্তব্যে সমালোচনায় সরব হয়েছিল বিভিন্ন মহল। এরপর ইনফোসিসের এই ছাঁটাই। সবমিলিয়ে হঠাৎ করে কাজ চলে যাওয়ায় কার্যত মাথায় হাত এই বিপুল পরিমাণ চাকরিহারা আইটি কর্মীদের।