মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বাংলাদেশজুড়ে শুরু হয়েছে ডেভিল হান্ট অপারেশন। অপারেশনে একের পর এক আওয়ামী লিগের সমর্থকদের টার্গেট করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানের আওতায় ৩৪৩ জনসহ মোট ১৫২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত রাখা হবে৷ পাশাপাশি তিনি বলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সরকারের বার্তা পরিষ্কার৷ কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন এবং প্রকৃত অপরাধীদের যেন ছাড় না দেওয়া হয়৷ অপরাধী হলে পুলিশদেরও ছাড় দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানের আওতায় একটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি ম্যাগাজিন, ১১ রাউন্ড গুলি, ছয়টি শটগান কার্তুজ, তিনটি ছুরি, তিনটি তলোয়ার, একটি কুড়াল, ১০টি ককটেল, আটটি লাঠি, চারটি রড ও চারটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর৷
বাংলাদেশজুড়ো যখন অপারেশন ডেভিল হান্ট যখন পুরোদমে চলছে তখন তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে যেন কোনো ডেভিল পালাতে না পারে। রাজধানী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর একটি কর্মশালায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুষ্কৃতী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসবাদীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে। কিন্তু তাদের দোসর দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদীরা, তাদের দোসররা এ দেশের জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে লুটপাট করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, যারাই ফ্যাসিবাদীদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তাদের দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ডেভিল হান্ট অপারেশন কী?
ইংরেজি শব্দ ডেভিলের অর্থ শয়তান আর হান্ট অর্থাৎ শিকার। ফলে ডেভিল হান্ট-এর অর্থ দাঁড়ায় শয়তানের শিকার করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসবাদী ও দুষ্কৃতীদের বোঝানো হয়েছে। সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, প্রতিটি অপারেশনের একটি কোড নেম দেওয়া হয় অপারেশনকে ফোকাস করার জন্য। তেমনই এই অপারেশনের নাম রাখা হয়েছে ডেভিল হান্ট অপারেশন।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে সারা দেশে একযোগে পরিচালিত হচ্ছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। এই অপারেশন যৌথভাবে পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যা ব, পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপারেশনে জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবাদীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন নষ্ট করতে না পারে সেই জন্য এ অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রথম রাতে গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের ৪০ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশজুড়ে একযোগে শুরু হয়েছে এই অভিযান। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। তারপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। তারপরই ৮ ফেব্রুয়ারি অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।