মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ১৯৯৯ সালে মে-জুলাই মাসে কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল। অন্যদিকে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির টেস্ট সিরিজে ভারত পাকিস্তানকে হারায় ম্যাঞ্চেস্টার ইংল্যান্ডে।
২০০০ সালের ৩ জুন ঢাকায় হয় এশিয়া কাপ ম্যাচ
২০০১ সালে লস্কর-ই-তৈবা ও জইশ-ই-মহম্মদের ৫ জঙ্গি হামলা চালায় নয়াদিল্লির সংসদে। ৮জন নিরাপত্তা আধিকারিক ও ১ বাসিন্দার মৃত্যু হয়।
২০০২ সালের ২২ জানুয়ারি, কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে হামলা চালানো হয়। ৪জন পুলিশ কনস্টেবল শহিদ হন। ২০জন আহত হন। হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান স্পন্সরড জঙ্গি সংগঠন। ২০০৩-এর ২৩ মার্চ, জম্মু-কাশ্মীরের নাদিমার্গে ২৪জন কাশ্মীরি পন্ডিতকে খুন করেছিল জঙ্গিরা।
কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে হামলা এবং কাশ্মীরি পন্ডিতের উপর হামলার পরও ২০০৪ সালে টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ভারতীয় ক্রিকেট দল। তারপর ফের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতে যায় ভারত। এর পরিমাণ মানুষের মৃত্যুর পর ক্রিকেটের মাঠে জয়টা কি সত্যিই জয় ? কেন ভারত পাক ম্যাচ নিয়ে কিছুই ভাবছে না বিসিসিআই ?
২০০৪ সালের ২৫ জুলাই, শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় ফের অনুষ্ঠিত হয় ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ। ২০০৫ সালে মার্চ-এপ্রিল টেস্ট সিরিজের জন্য ভারতে আসে পাক ক্রিকেট দল।
২০০৫ সালের ২৯ অক্টোবর, দিল্লিতে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৬০জনের। আহত হন ২০০জন মানুষ।
২০০৬ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় দল পাকিস্তানে গিয়ে টেস্ট সিরিজ খেলে। তাতে পাকিস্তান জয়লাভ করে। একইবছরে ৭মার্চ বারনসীতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২৮জনের প্রাণ কেড়ে নেয় পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন। একই বছরে ১৫ অক্টোবর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারায় ভারত। ২০০৬ সালেই ১১ জুলাই মুম্বাইয়ে ট্রেনে বিস্ফোরণে ২০০জনের মৃত্যু হয়।
এরপরও ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচে কোনও দাড়ি পড়েনি। ২০০৭ সালে আইসিসি টি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপ। ২০০৮ সালে এশিয়া কাপ। ২০০৭-৮ সালে টেস্ট সিরিজ হয়েছিল।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের ১৩ মে- জয়পুরে বিস্ফোরণে ৬৩জন প্রাণ হারান। ২০০-র বেশি মানুষ আহত হন। ২০০৮ সালের ২৬ জুলাই আহমেদাবাদ বোমা বিস্ফোরণে ৫৬জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ২০০জন। ২০০৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, দিল্লি বিস্ফোরণে ৩০জনের মৃত্যু হয়। শতাধিক মানুষ আহত হন। ২০০৮ সালের ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বরের মধ্যে মুম্বইতে হামলা চালিয়ে ১৬৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে জঙ্গিরা।
একদিকে যখন ওয়ার্ল্ড কাপ, এশিয়া কাপ, টেস্ট সিরিজ চলছিল, তখনই একের পর এক বিস্ফোরণে মৃত্যুমিছিল হয়েছে ভারতে। ২০১৬-র ছবিটাও একইরকম। একদিকে যখন ২০১৬-র ২৭ ফেব্রুয়ারিতে এশিয়া কাপ, ১৯ মার্চ আইসিসি টি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপ চলছে, ঠিক তখনই দোসরা জানুয়ারি পাঠানকোট এয়ারবেসে হামলায় ৭জন নিরাপত্তারক্ষী শহিদ হন। ১৮ সেপ্টেম্বর উরি হামলায় ১৯জন সেনাজওয়ান শহিদ হন।
এত পরিমাণ সাধারণ মানুষ, এত বীর জওয়ানের মৃত্যুর পরও ক্রিকেট থামছে না।
২০১৭ সালের জুনে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। একই বছরে ১৮ জুন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল। ২০১৮-র ১৯ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপ। ২৩ সেপ্টেম্বর দুবাইতে পাকিস্তানকে ৯ উইকেটে হারায় ভারত। ২০১৯-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা চালায় জইশ-ই-মহম্মদ। ৪০জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হন। এরপরও ক্রিকেট খেলা থামেনি। অন্যদিকে ২০২১, ২০২২, ২০২৩-এও পাকিস্তানের আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত জঙ্গিরা একাধিক ছোট বড় হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে এমনই ২৫ হাজার জওয়ানের নাম খোদাই করা আছে। সেনা, বায়ুসেনা নৌসেনায় কর্মরত যেসব জওয়ান শহিদ হয়েছেন। লড়াই বা যুদ্ধে যত জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন, তার চেয়ে পাকিস্তানের সাহায্যপ্রাপ্ত জঙ্গি হামলায় অনেক বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এরপরও কেন থামছে না ভারত পাকিস্তানের খেলা? বিরাট কোহলি যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন যখন স্টেডিয়ামে কোহলি কোহলি রব ওঠে, তখন মানুষ পাকিস্তানের এই প্রতারণা, হামলার ঘটনাগুলি বেমালুম ভুলে যান। এতে বিরাট কোহলি বা ক্রিকেটপ্রেমীদের কোনও দোষ নেই। দোষটা হল বিসিসিআইয়ের। তারা কেন ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ খেলাকে বারবার সায় দিচ্ছে ? ভারত যখন রাষ্ট্রসংঘ বা কোনও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে গিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি হামলার নিন্দা করে, তখন পাকিস্তান এইসব ম্যাচের দোহাই দিয়েই পাল্টা প্রশ্ন করে তাহলে ভারত তাদের সঙ্গে ম্যাচ খেলছে কেন ?