মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জলবন্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার মধ্যে। তারপর আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনার পর, ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন। এরপর সেদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা, একের পর এক ভারতবিরোধী স্লোগান উঠে আসার পর দুই দেশের সম্পর্কে ক্রমশ অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাঁচ দিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গে এলেন ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। ১১ জন পদস্থ কর্মকর্তা এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে নয়াদিল্লি থেকে আসা কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা বৈঠক করবেন। গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে দুপক্ষের মধ্যে। প্রতিনিধি দলটি ফরাক্কা ব্যারাজ পরিদর্শন করবে। গঙ্গা থেকে পদ্মায় কত পরিমাণ জল প্রবাহিত হয়, তাও খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। ফরাক্কা ব্যারাজ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নদীর জল বণ্টনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গঙ্গা থেকে নির্ধারিত পরিমাণ জল কী ভাবে পদ্মায় প্রবাহিত হচ্ছে, তাও পর্যবেক্ষণ করবেন দুই দেশের বিশেষজ্ঞেরা। এরপর ৭ মার্চ কলকাতায় একটি বিলাসবহুল হোটেলে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসবেন। গঙ্গার জলবণ্টন ছাড়াও তিস্তা এবং অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির বিষয়ে কথাবার্তা হতে পারে দুই দেশের মধ্যে। তিস্তা নদীর জলবণ্টন চুক্তি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে, বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর ফলে দুই দেশ গঙ্গার জল ভাগ করে নেওয়ার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করে। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে এটি শেষ হওয়ার কথা। ২০২৬-এ চুক্তির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নতুন করে পর্যালোচনা ও সংশোধন আনা হতে পারে এই চুক্তিতে। উভয় দেশ গঙ্গার প্রবাহ ও বণ্টন নিয়ে নিয়মিত বৈঠকে বসে। তবে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ অভিযোগ তুলেছে যে, শুষ্ক মরসুমে ফরাক্কা ব্যারেজ থেকে তারা পর্যাপ্ত জল পায় না। অন্য দিকে, ভারতের দাবি, জলপ্রবাহ ওঠানামা করায় জলের পরিমাণ কমবেশি হয়। এই বৈঠকে জলবন্টন সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে তার সমাধান করবে দুইপক্ষ।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মহম্মদ ইউনুসের আমলে ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে জলবন্টন চুক্তির সমস্যার সমাধান যথাযথভাবে হয় কিনা সেটাই দেখার।