মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে বাংলাদেশ ছেড়ে তিনি ভারতে রয়েছেন। এরইমধ্যে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয় এবং তার দায়িত্ব নেন মহম্মদ ইউনুস। ৭মাসের বেশি সময় পেরোলেও সেদেশে যেন অশান্তি থামার নাম নেই। এই পরিস্থিতিতে স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন মহম্মদ ইউনুস। একের পর এক মন্তব্য শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তিনি। ইউনুস বলেন, হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গোপন বন্দিশালার একটি নেটওয়ার্কের তত্ত্বাবধান করতেন। সেখানে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হতো, কাউকে কাউকে হত্যার অভিযোগও আছে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে এসব করা হত।
সাক্ষাৎকারে ইউনুস দাবি করেন, গোপন বন্দিশালাগুলোর একটি পরিদর্শন করেছেন, যার কোড নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়নাঘর’। ইউনুস বলেন, তিনি সেখানকার দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গেছেন। হাসিনা সরকারে থাকার সময় তাঁর তত্ত্বাবধানে মানুষকে জোরপূর্বক গুম করার পাশাপাশি গত বছর জুলাই ও আগস্ট মাসে বিক্ষোভকারীদের গণহারে হত্যা করা হয়। বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। শুধু তাঁর নয়, বরং যাঁরা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর পরিবারের সদস্য, তাঁর আশ্রিত ব্যক্তি অথবা সহযোগীদের, তাঁদের সবার বিচার করা হবে।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, শতাধিক অ্যাকটিভিস্টকে অপহরণ, নির্যাতন এবং হত্যা করতে তিনি তাঁর নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ গোপন বন্দিশালা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ওই সব বন্দিশালার তদারকিতে যাঁরা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের অনেকে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে হাসিনার দাবি, রাজনৈতিকভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন তিনি।
ইউনুস বলেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের সংখ্যা এবং ব্যাপ্তির কারণে কাজ শুরু করতে সময় লাগছে। তাদের প্রত্যেকে এর সঙ্গে জড়িত ছিল, পুরো সরকার জড়িত ছিল। ফলে আসলে কারা এবং অতি উৎসাহী হয়ে কারা এই কাজ করেছে, কারা আদেশ পালন করতে গিয়ে এটা করেছে এবং কারা ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ওই সব কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন, সেই স্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দুটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ‘আনুষ্ঠানিক চিঠি’ পাঠানো হলেও নয়াদিল্লি থেকে এখনও ‘আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনাকে আদালতের মুখোমুখি করা হবে, তিনি সশরীর বাংলাদেশে উপস্থিত থাকুন বা না থাকুন। এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মহম্মদ ইউনুস। ইউনুসের হুঁশিয়ারির মুখে কি আদৌ মাথা নোয়াতে হবে শেখ হাসিনাকে ?