শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ সংক্রান্ত এক বিতর্কিত ইস্যুতে ফের সরগরম কলকাতা হাইকোর্ট। অতিরিক্ত শূন্যপদ তথা ‘সুপার নিউমেরারি’ পোস্ট তৈরি করে অনিয়মিতভাবে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে সোমবার আদালতে উত্তপ্ত শুনানি হয়। মামলার গ্রহণযোগ্যতা, দুর্নীতির প্রসঙ্গ এবং প্রার্থীদের অধিকার—এই তিন প্রশ্নে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কে সরগরম হয়ে ওঠে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের একক বেঞ্চ।
ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক- এদিনের সওয়ালে প্রবীণ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “ডিভিশন বেঞ্চ আগেই জানিয়েছিল, মামলার গ্রহণযোগ্যতা আগে বিচার করতে হবে। সেই প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনি। তবে একক বেঞ্চে এই সংক্রান্ত একাধিকবার শুনানি হয়েছে।”
বিচারপতি জানতে চান, “নিয়োগপত্র কি আদৌ দেওয়া হয়েছিল?” জবাবে বিকাশরঞ্জন জানান, আদালতের দায়িত্ব আগে এটি খতিয়ে দেখা যে মামলাটি আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না। তিনি আরও বলেন, “দুর্নীতি আড়াল করতেই এই সুপার নিউমেরারি পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল। শরীরশিক্ষায় ১০১৯ এবং কর্মশিক্ষায় ১২৩৭টি শূন্যপদ ছিল, যেগুলির জন্য বিজ্ঞপ্তি আদালতের নির্দেশে প্রকাশিত হয়েছিল।”
সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। “সরকার একটি অভিভাবকের ভূমিকায় থাকে। সংবিধানের প্রতি শপথ নেওয়া সরকারের কর্তব্য—সব প্রার্থীর প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা। কিন্তু এখানে নির্বাচিত কয়েকজনকে চাকরি দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল,” বলেন বিকাশরঞ্জন। তাঁর মতে, সংবিধানের ১৪ ও ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই ধরনের পদে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত ছিল, কারণ এগুলি একেবারে নতুন পদ। “এই পোস্ট তৈরি হয়েছিল শুধু চাকরি রক্ষা করার জন্য, কাউকে চাকরি দেওয়ার জন্য নয়,”—এমনই ছিল তাঁর অভিযোগ। পাশাপাশি তিনি আবেদন করেন, আবেদনকারীদের ওএমআর শিট প্রকাশ্যে আনা হোক।
সিবিআইয়ের তরফে আদালতে হাজির হন আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী। তিনি বলেন, “দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, শরীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষার এই দুটি অংশ প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় পড়ে না। এদের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে।”
বিচারপতি সিবিআইয়ের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, “আপনারা নিজেদের চার্জশিটে লিখেছেন, এই পোস্টগুলি বিক্রি করা হয়েছিল। এই সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য রয়েছে কি? এসএসসির সার্ভারে কি এর প্রমাণ আছে? এতদিন ধরে যে তদন্ত করেছেন, তার সঙ্গে কি এই বিষয়টি সরাসরি সংযুক্ত?” জবাবে ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, “এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সিলড কভারে আদালতে জমা দেওয়া হবে।”
এর পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন বিকাশরঞ্জন, “ওঁরা এইসব তথ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন, সেটাও আদালতের সামনে স্পষ্ট করা হোক।” এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী মঙ্গলবার। আদালতের নির্দেশে মেরিট লিস্ট পেশ করার কথা জানানো হয়েছে সিবিআইকে।