কলকাতা: চারদিকে কাপড়ের ত্রিপল, পলিথিনের বড় বড় হোডিং সঙ্গে তারের ফাঁসে যেন আটকে আছে শহর। তারই মাঝে শহরের ব্যাঙের ছাতার মতো ফুটপাথ দখল করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অস্থায়ী হকারদের দোকান। সব মিলিয়ে ক্রমশ জতুগৃহ হয়ে উঠেছে শহর। বিগত বছর থেকে পর পর পাঁচটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের কড়াল গ্রাসে চলে গেছে তিলোত্তমা। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, পুরনো বিল্ডিংটির চারপাশে প্লাস্টিক ও প্রচুর দাহ্যবস্তুর উপস্থিতির কারণে গড়িয়াহাটে ট্রেডার্স এসেম্বলি বিল্ডিং-এ আগুন লাগাটা খুব স্বাভাবিক ছিল ঘটনা। ফুটপাতে একটি হকারের দোকানে থাকা প্লাস্টিক ত্রিপল থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে৷ অভিযোগ উড়িয়ে হকার্স ইউনিয়নের এক নেতা জানান, রাতের বেলা তো হকাররা সেখানে থাকেন না৷ তাহলে আগুন লাগল কী করে? দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালা চলছে৷ আগুন শুধুমাত্র কাপড়ের দোকানেই লাগেনি বরং ব্যানার, পোস্টারের সাহায্যে ক্রমশ সেটি লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করে বিল্ডিং-এর গা বেয়ে। ফলে কিছুক্ষনের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে গোটা বিল্ডিং। মধ্যরাতে বিল্ডিং-এর আবাসিকদের মধ্যে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। রাতের অন্ধকারে দিশাহারা মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। রাত কেটে ভোর হয়ে গেলেও টানা ৬ ঘন্টার চেষ্টায়র পরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়েছে দমকলকে।
দীর্ঘ ১২ ঘন্টার চেষ্টায় রবিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলে ডিজি ফায়ার জগমোহন বলেন, “দমকলের প্রাথমিক অনুমান শর্ট সার্কিট থেকে আগুণ লাগে। বিল্ডিং-এর ফায়ার সেফটির কোন রকম ব্যবস্থাই ছিল না”। শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। আগুন লাগার ঘটনার জন্য চূড়ান্ত অব্যবস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ” আমাদের ব্যবসা করতে দিতে আপত্তি নেই। তবে নিয়ম না মেনে ব্যবসা করলে তার ফল সমাজের বাকি মানুষেরাও ভুগবেন।” ঘটনার দায় কার্যত স্বীকার করে নেন দমকল মন্ত্রীও। আগুন লাগার ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে৷ ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুক লাইভ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফেসবুক লাইভে কেউ কেউ সর্বস্য হারানোর ভয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আগুনের সাথে পাল্লা দিয়ে কুন্ডুলি পাকানো কালো ধোঁয়ার গ্রাসে চলে যায় গোটা এলাকা। ট্রেডার্স এসেম্বলির উপরের বিল্ডিংটায় আগুন না পৌঁছালেও ধোঁয়ার গ্রাসে চলে যায় গোটা বাড়িটি। রাত বাড়ার সাথে বাড়তে থাকে লেলিহান শিখা। শীতের শহরে বিনিদ্র রজনী ছাড়খার করে দেয় বহু মানুষের রুটি রুজির ব্যবস্থা।