ওয়েব ডেস্কঃ পশ্চিমের শিল্পীদের অঙ্কিত তৈল চিত্র থেকে যেমন দেখি আমরা, সোনালি চুলে নীল চোখের মায়ায় আলখাল্লা পড়া রাজপুত্রের মতো তাঁর চেহারা। পশ্চিমের শিল্পকলায় সবচেয়ে বেশি আঁকা হয়েছে তাঁর ছবি। কিন্তু আসলে যিশুকে কেমন দেখতে ছিল জানেন, ঈশ্বরকে আমরা রাজবেশে কল্পনা করতে ভালোবাসি। প্রকৃত পক্ষে, যিশুর যে চেহারার সঙ্গে আমরা পরিচিত তার উৎস বাইজান্টাইন যুগের, চতুর্থ শতাব্দী বা তার পরবর্তী কালে। এগুলো মূলত সম্রাটকে কল্পনা করে অঙ্কিত। ঠিক যেমনটা দেখতে পাই রোমের সান্তা পুডেনজিয়ানা গীর্জায়। প্রাচীন রোমের পোশাক সোনালি টোগা পড়া যিশু এই গির্জায় রাজবেশে বসে আছেন বিশ্ব শাসক রূপে। বাইজান্টাইনের শিল্পীরা যিশুখ্রীষ্টকে স্বর্গীয় ক্ষমতাসম্পন্ন মহাবিশ্বের রাজা হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলেন। তাই তারা তাঁকে তৈরি করেন দেবরাজ জিউসের এক তরুণতর সংস্করণ হিসেবে। সেই চেহারা কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে হিপিদের মতো হয়েছিল পরবর্তীকালে। তাহলে আসল যিশুর চেহারা কেমন ছিল সে নিয়ে প্রশ্ন আসেতেই পারে। প্রথম যুগের খ্রীস্টানরা যিশুকে স্বর্গীয় শাসক হিসেবে চিত্রিত করতেন না। বরং তারা যিশুকে কল্পনা করতেন সাধারণ মানুষের মতো। দাড়িবিহীন ছোট চুলের সাধারণ রূপে কল্পনা করতেন তারা। তখনকার দিনে একজন দার্শনিকের ছবি মানে তার উস্কোখুস্কো চেহারা, পোশাক আর দাড়ি তাঁর পরিচয়। অন্যদিকে, প্রথম শতাব্দীর গ্রীক, রোমানদের মধ্যে দাড়ি কামানো এবং ছোট চুল রাখার চল ছিল । লম্বা চুল-দাড়ি দেবতাদের প্রতীক। ইহুদিদের অবশ্য দাড়ি থাকত না। জেরুজালেম দখলের পর রোমান মুদ্রায় যে ইহুদিদের ছবি পাওয়া গিয়েছে সেখানে অবশ্য ইহুদি দাসেদের মুখে দাড়ি দেখা গিয়েছে। ম্যাথিউ-এর সুসমাচারে অনুচ্ছেদ ১১-তে উল্ল্যেখ রয়েছে, যে তার সমালোচকরা অভিযোগ করছেন যে যিশু খুব বেশি মদ খেতেন। ছবিতে যিশুকে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছিল, প্রভু নাকি আদৌ সেই রকম ছিল না। কারণ তিনি আলখাল্লা পড়া বড়লোকেদের থেকে সকলকে সতর্ক থাকতে বলতেন। সাধারণত সে সময় পুরুষরা হাঁটু পর্যন্ত লম্বা ‘চিতন’ পড়তেন, মেয়েরা পড়তেন গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা পোশাক। যিশু এর ওপর একটা হিমেশন বা শাল পড়তেন এমনই বর্ণনা পাওয়া যায়। এই শালের মান, আকার এবং রং থেকে সম্মান বোঝা যেতো। সন্ত মার্ক, তাঁর কল্পনায় যিশুকে বর্ণনা করেছেন রং না করা সাধারণ কাপড় পড়া সাধারণ মানুষ হিসেবে। সে যুগে চপ্পল বা স্যান্ডেল পড়া হতো। যিশুর মুখের আদল ছিল সাধারণ মানুষের মতোই। তার নীল চোখ বা কোনও রকম ব্যতিক্রমী চেহারা কোনওটাই ছিল না।