Date : 2024-04-25

মেন্ডা লেখা গ্রাম যেন দেশের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ

ওয়েব ডেস্ক: এক দেশ এক জাতি, এই সারকথা আমাদের দেশে সংহতির প্রধান বার্তা। এ দেশের সর্বত্রই একই আইন ও একই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত। অথচ আপনি কি জানেন, এই দেশের মধ্যেই এমন এক গ্রাম রয়েছে যেখানে পৃথক আইন, পৃথক অর্থনীতি এমন কি পৃথক সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে? এই গ্রামে গ্রামসভাই হল গ্রামবাসীদের সর্বময় কর্তা। হ্যাঁ, মহারাষ্ট্রের এই গ্রামে গ্রামসভাই আলাদা অর্থনীতি, আলাদা আইনশৃঙ্খলা এবং আলাদা সমাজনীতি তৈরি করে ফেলেছে। মহারাষ্ট্রের এই গ্রামটিতে দেশের অন্য প্রান্তের মতো কেন্দ্রীয় আইন মেনে চলে না। সমস্থ মানুষ তাদের সম্পত্তি গ্রামসভাকে দান করে দিয়ে থাকেন। গ্রামের নাম গাডচিরিলি জেলার মেন্ডা লেখা। বাসিন্দাদের মধ্যে জমির ব্যক্তিগত মালিকানার প্রতি কোন বিশ্বাস নেই। যা কিছু সব গ্রামসভার দন্ডমুন্ড কর্তারা নির্ধারণ করে থাকেন। উপজাতির অধ্যুষিত এই গ্রামে মোট ৪৮০ জনের বাস। গ্রামের মানুষের সমস্থ সম্পদ জমা থাকে গ্রামসভার কাছেই। তারাই গ্রামবাসীদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকেন। মহারাষ্ট্রের মেন্ডা লেখা গ্রামে পঞ্চায়েত নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যত অচল। এই গ্রামে গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনও প্রতিনিধি চলে যান না। গ্রামের মানুষ যেন অন্য কারোর কাছে তাদের সম্পত্তি বিক্রি না করতে পারে তার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামসভার কাছেই সম্পত্তি দান করতে হয়। এই আইন গ্রামদান আইন হিসাবে বাসিন্দাদের কাছে পরিচিত। গ্রামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় এই গ্রামসভার মাধ্যমেই। মহারাষ্ট্রের মেন্ডা লেখা গ্রামের মানুষের আয় সবটাই নির্ভর করে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর। তা সত্ত্বেও যথেষ্ট সচ্ছল এই গ্রামের অর্থনীতির অবস্থা। গ্রামের বাইরে ৩০০ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে বিশাল বাঁশঝার, যা থেকে বছরে প্রায় এক কোটি বাঁশ রপ্তানি করে অর্থ উপার্জন করে গ্রামের মানুষ। সেই আয়ের সমস্ত স্বত্ত্ব পায় গ্রামসভা। গ্রামসভা এই অর্থের সবটাই বিলিয়ে দেয় গ্রামবাসীদের মধ্যে। তার মধ্যে থেকেও গ্রামবাসীরা তাদের অর্থের ১০ শতাংশ দান করেন গ্রামসভার কাছে। শুধু অর্থনীতিই নয়, এই গ্রামের আইন-শৃঙ্খলাও নির্ধারিত হয় গ্রামের নিজেস্ব অাইনের মাধ্যমে। অবশ্য কোন ফৌজদারী আইনের ব্যপারে হস্তক্ষেপ করে না গ্রাম সভা। তবে গ্রামের সমস্থ সম্পত্তি এক জায়গায় থাকার কারণে সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চত থাকে গ্রামবাসীরা।