কলকাতা: ‘পঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাত-মারাঠা/দ্রাবির-উৎকল-বঙ্গ’ জাতীয় সঙ্গীতে উদ্ধৃত এই লাইনটির মধ্যে শুধু কতগুলি প্রদেশের নাম করা হয়নি বরং রয়েছে আমাদের দেশের এক একটি প্রদেশের এক এক রকম ভাষা-সংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ছবি। সেই বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যকে মেলে ধরাই ভারতবর্ষের সংহতির ছবি। কিন্তু (নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান/ বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান)-এর দেশে ইদানিং কালে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে। রাজনৈতিক উত্তাপে বেড়ে চলেছে জাতি, ধর্ম ও ভাষাগত বিভাজনের প্রবনতা। তবে সেই অসহিষ্ণুতার মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির টুকরো কোলাজও ধরা পড়ে। বাবুঘাটের সাগর মেলা উপলক্ষে তৈরী হয় অস্থায়ী ক্যাম্প। বহু বছর ধরে বাবুঘাটের পাশে ময়দানে তীর্থযাত্রীরা এসে বিশ্রাম নেন এই অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে। আবার মেলা দর্শন করে ফেরার পথে দলেবলে এখান থেকেই নিজেদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ফিরে যান তীর্থযাত্রীরা। গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরী অস্থায়ী ক্যাম্পও মেলার চেহারা নিয়েছে। যা আসলে বিশাল গঙ্গাসাগর মেলার টুকরো চিত্র বলা চলে।গঙ্গাসাগর স্নানের পুণ্যদিনের কয়েকদিন আগে থেকেই সংহতির ছবিটা দেখা যায় বাবুঘাট চত্বরে। প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলায় আগত পুণ্যর্থীদের জন্য আয়োজিত মেলায় রুটি-রুজির টানে খিদিরপুর, মেটিয়াব্রুজ, ব্রাবোর্ণ রোড থেকে আসেন মহঃ মকবুল, মহঃ আশিকরা। পশরা সাজিয়ে মেলায় বিকিকিনিতে ব্যস্ত তারা। জামাকাপড় থেকে শুরু করে ব্যাগ, জুতো, খেলনা কি নেই সেখানে । ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মধ্যেই বিক্রি করেন নানা রকম সামগ্রী। বিশ্রামের ফাঁকে হাতের কাজের নানা টুকিটাকি জিনিসের ঠিকানা হয়ে ওঠে বাবুঘাটে গঙ্গাসাগরের তীর্থযাত্রীদের এই অস্থায়ী ক্যাম্প। মহঃ মকবুল, মহঃ আশিকদের প্রশ্ন করা হলে তাদের মুখে একটাই উত্তর, ধর্ম থাক যার যার কাছে, পেশার কাছে নয়। মত আর পাল্টা মতে উত্তপ্ত থাকে রাজনীতির আঙিনা। এসব থেকে অনেক দূরে থাকে দিনআনা-দিনখাওয়া ভারতের বাসিন্দা মহঃ মকবুল, শেখ নাজিবুলরা। তারা এসব রাজনীতির তত্ত্ব কথা থেকে অনেক দূরে থাকেন। এখানে স্থান নেই বিদ্বেষের। তাই বাবুঘাট চত্বরে গেলে গঙ্গাসাগর মেলায় যেন মিলে যেতে দেখা যাবে নানা ধর্মমতকে।