ওয়েব ডেস্ক: সামনেই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন। আর তার আগে মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’: দ্য মেকিং অ্যান্ড আনমেকিং মনমোহন সিং। সঞ্জয় বারুর লেখা বই ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’-এর ওপর ভিত্তি করে সিনেমাটি তৈরি। ছবির পরিচালনায় রয়েছেন বিজয় রত্নাকর গুট্টে। এই সিনেমার রিভিউ দেওয়ার আগে একটা কথা বলতেই হয়। প্রবাদে রয়েছে ‘ডোন্ট জাজ অ্যা বুক বাই ইটস কভার’। আর এই ছবিটির সঙ্গে প্রবাদটির প্রাসঙ্গিকতা যথাযথ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ ঠিক কোন বার্তা দিতে চাইছে সেই ভাবনা নিয়ে হলে যাচ্ছেন দর্শকরা। আবার কেউ কেউ মনে করছেন কংগ্রেস জমানার পর্দাফাঁস করার বিশেষ প্ল্যাটফর্ম এই ছবিটি। অন্তত সিনেমার ট্রেলর দেখে এমনটাই ধারণা তৈরি হয়েছে দর্শকদের। তবে বলে রাখা ভালো, যদি কেউ মনে করেন এই ছবিটি কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের সুবিধার্থে তৈরি, তাহলে আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। মূলত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং তাঁর এক সময়ের মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারুর পারস্পারিক সম্পর্ক ও ড.মনমোহন সিংয়ের চরিত্রের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবিটিতে। আসলে, চেনা চরিত্রকে দর্শকের চোখে ঠিক তেমনটাই ‘চেনা মানুষ’ তৈরি করে তোলার চ্যালেঞ্জ খুব একটা কম নয়। আবার সেই চেনা চরিত্রদের নিয়ে তাঁদের অচেনা দিকের চিত্র তুলে ধরাটাও খুব একটা সহজ কাজ নয়। তাই, এই কাহিনি কতটা বায়োপিক আর কতটা ঘটনাকেন্দ্রিক তা বিচার করবে দর্শক। আপাতত গল্পের প্রেক্ষাপট কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের সময়। সময়কাল ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল। যে সময় কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। সিনেমার ট্রেলার দেখে হয়তো মনে হতে পারে সোনিয়া-মনমোহন দ্বন্দ্ব বা তাঁদের পারস্পরিক বাদানুবাদ ফুটিয়ে তোলাই ছবিটির মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে একেবারেই ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে সিলভার স্ক্রিনে। ছবির শুরু ২০০৪ সালে কংগ্রেসের জয়ের খবর দিয়ে। তারপর একাধিক দুর্নীতি আর অন্যদিকে দেশকে উন্নয়নমুখী করে তোলার চেষ্টা। যেখানে সেই দুর্নীতি ও উন্নয়নের মাঝে পড়ে গিয়েছে একটি চরিত্র তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এই উন্নয়ন আর দুর্নীতির অন্তরালে যে সরকারি ও রাজনৈতিক সমীকরণের গল্প রয়েছে তার চরম ইঙ্গিত রয়েছে ছবির ক্লাইম্যাক্সে। এই বিতর্কিত রাজনৈতিক পর্বকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সত্যিই সাহসিকতা দেখিয়েছেন পরিচালক বিজয়। ছবিটির মূল দুই চরিত্র অর্থাৎ ড.মনমোহন সিং ও সঞ্জয় বারু। তাদের চরিত্রে অনুপম খের (ড.মনমোহন সিং) এবং অক্ষয় খান্না (সঞ্জয় বারু) এক কথায় অনবদ্য। ছবি জুড়ে অনেকক্ষেত্রেই চরিত্রকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে গিয়ে মনমোহন সিং-এর কণ্ঠস্বরকেও ‘নকল’ করতে দেখা গিয়েছে অনুপম খেরকে। অক্ষয় খান্না সেদিক থেকে ‘অজানা’ চরিত্রের প্রেক্ষিতে অভিনয় দক্ষতা ফুটিয়ে তোলার সুযোগ পেয়েছেন। সোনিয়া গান্ধীর চরিত্রে জার্মান অভিনেত্রী সুজানে বার্নেট যথাযথ এবং পরিমার্জিত। যদিও পলিটিক্যাল থ্রিলারটিতে কোনও গান রাখা হয়নি। তবে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর অন্য মাত্রা মাত্রা দিয়েছে ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’-কে। অনেকেই মনে করছেন মনমোহন জমানার ১০ বছরের ইতিহাস ঝালিয়ে নিতে এই ছবিটি একটি দৃষ্টান্ত।
অভিনেতা: অনুপম খের, অক্ষয় খান্না, সুজানে বার্নেট
পরিচালক: বিজয় রত্নাকর গুট্টে Score Card: 6/10