Date : 2024-03-19

জাহাঙ্গীরের হীরে নিয়ে গেল শকুনে!

ওয়েব ডেস্ক: সময়টা ১৬২৬ সাল। জাহাঙ্গীরের দেওয়া উপহারের হীরের নাকি শেষ পর্যন্ত ঠাঁই হয়েছিল এক শকুনের কাছে। লোকশ্রুতি, আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ী খাজা মর্টিনিফাস সম্রাট জাহাঙ্গীরকে পাঁচ বোতল ওপোর্টো ওয়াইন উপহার দিয়েছিলেন। উপহার পেয়ে বাদশাহ তখন বেজায় খুশি। বাদশাহ তখন রিটার্ন গিফট হিসাবে কি দিয়েছিলেন জানেন? আস্ত একটি হীরে! কিন্তু খাজা মর্টিনিফাস উপহারের হীরাটি দিয়ে দেন তার প্রিয় বন্ধু ও সঙ্গী মির্জা জুলকারনাইনকে, যাকে বাদশাহ আকবর আবার নিজের সৎ ভাই বলে মনে করতেন। মির্জা জুলকারনাইন নিজেও ছিলেন একজন আর্মেনিয়ান খ্রিষ্টান। ওই হীরকখন্ডটি তিনি একটি সোনার আংটির ওপর বসিয়ে প্রায় সারা জীবন নিজের আঙুলে পরেছিলেন। মির্জা জুলকারনাইন (যাকে বলা হত মুঘল জমানায় খ্রীষ্টধর্মের যাজক) যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তিনি সেই হীরাটি উপহার দিয়ে যান আগ্রার হিন্দুস্তান-টিবেট অ্যপোস্টলিক মিশনের ফাদার প্রভিন্সিয়ালকে। দিল্লিও তখন এই মিশনের আওতায়। ফাদারের কাছ থেকে সেই হীরাটি একে একে মিশনের পরবর্তী যাজকদের হাতে উত্তরাধিকার সূত্রে হাতবদল হতে থাকে। আর্মেনিয়ান খ্রিষ্টান সমাজের একজন উত্তরসূরী নাটালিয়া বুয়ার এই হীরের আংটি সম্পর্কে বিশদে বিবরন দিয়েছেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, একদিন মধ্যাহ্নভোজের পর আর্চবিশপ যখন নিজের রান্নাঘরের বাইরে হাত ধুতে গিয়ে আংটিটি খুলে বেসিনের ওপর রেখেছিলেন, উজ্জ্বল হীরাটির লোভে আকৃষ্ট হয়ে একটি শকুন নিমেষে এসে ছোঁ মেরে নিয়ে পালিয়েছিল। তবে হীরে নিয়ে সে খুব বেশিদূর পালাতে পারেনি। কিছুটা দূরে মাইকেল দ্য আর্চঅ্যাঞ্জেলের বিশাল মূর্তির পায়ের নিচে নিজের বাসায় নিয়ে গেছিল উজ্বল হীরেটি। শুধু হীরে নয়, শকুন আর্চবিশপের জলন্ত চুরুটের শেষ অংশটুকু নিয়েও বেমালুম চম্পট দিয়েছিল। তাতে অবশ্য শেষ পর্যন্ত শকুনের সাধের বাসাটাই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। সেখানেই শেষ নয়, সেই উজ্জ্বল আংটিটি সমেত শকুনের জ্বলন্ত বাসাটি গিয়ে পড়েছিল প্রায় একশো গজ দূরে আগ্রার ক্যাথিড্রাল অব দ্য ইম্যাকুলেট কনসেপশনের সিঁড়িতে। এরপর হীরেটির ইতিহাস আর জানা যায়নি। অবশ্য পরবর্তীকালে আকবর নাকি কোনো এক আর্মেনীয়ান সন্ন্যাসীকে ওই হীরেটি উপহার দিয়েছিলেন। তবে হীরে থাক বা না থাক, ১৮৪০র দশকে বেলজিয়ামে বানানো আর্চঅ্যাঞ্জেলের বিশাল মূর্তির নিচে বংশ পরম্পরায় আবার বাসা বানিয়ে রেখেছে শকুন। আর উপর থেকে বোধহয় এখনও উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে সেই শকুনের উত্তরাধিকাররা, আবারও যদি কোনও হীরের আংটির খোঁজ মেলে!