ওয়েব ডেস্ক: ইতিহাসবিদ ও নৃতত্ববিদরা মনে করেন, প্রাচীন তুরস্ক থেকে ইরান পর্যন্ত বস্তৃত নদী অববাহিকা অঞ্চলে মানব সভ্যতার প্রথম কৃষি কাজ আরম্ভ হয়। বন্য জীবন ত্যাগ করে প্রথম এই অঞ্চলের মানুষই পশুকে পোষ মানিয়ে গোষ্ঠিবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে শুরু করেছিল। কৃষিকাজ ও পশুপালকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলেই পৃথিবীর সর্বপ্রথম নগর সভ্যতার উৎপত্তি হয়। এবং ক্রমশ নগর সভ্যতা থেকে আসে রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং ধর্ম বিশ্বাস। যদিও আফ্রিকার যাযাবর গোষ্ঠির মধ্যে দৃশ্য-অদৃশ্য বস্তু ও শক্তির প্রতি আগে থেকেই বিশ্বাস ছিল। তবে গবেষকদের মধ্যে একটি ধারণা প্রচলিত আছে, আধুনিক নগর সভ্যতার উৎপত্তি রহস্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানুষের ধর্ম বিশ্বাসের প্রথম অঙ্কুর। কিন্তু প্রচলিত এই ধারণাকে প্রায় গুঁড়িয়ে দিয়েছে গোবেকলে তেপে। কি এই গোবেকলে তেপে?
উত্তরে প্রথমেই বলা যাবে এটা প্রাচীন মানব সভ্যতার এমন এক নিদর্শন যা কুঁড়ে ঘরের পর মানুষের তৈরি সর্ব প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন। এর অবস্থান বর্তমান দক্ষিণ তুরস্কের কাছে। গবেষকদের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে গোবেকলে তেপে হল পৃথিবীর সর্ব প্রথম উপাসনালয়। নিওলিথিক যুগের পশুপালকরা, কৃষকরা এখানেই আসতেন নিজেদের উৎপন্ন ফসলের নৈবেদ্য দিয়ে মনের বিশ্বাসের কাল্পনিক প্রতিমাকে সন্তুষ্ট করতে। এবং প্রার্থনা করত আগামী বছরের সম্পদ শস্য প্রাপ্তির জন্য। এই বিশাল মন্দিরের মাত্র ১০ ভাগ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এরপর সভ্যতার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের রূপ ও প্রকারভেদ বদলেছে নানা মত ও বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে। তবে সনাতন ধর্মের পীঠস্থান ছিল এই গোবেকলে তেপে। এই স্থাপত্যের গঠন ছিল অবিশ্বাস্য রকমের সুন্দর এবং আশ্চর্য। ১২০০০ বছর আগে চাকার ব্যবহার জানতো না মানুষ। এমনকি পশু দিয়েও মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল না তখন। কিন্তু গোবকলে তেপে-র স্থাপত্য বিষ্মিত হয়ে যাওয়ার মতো।
প্রতিটি পাথরকে সাজিয়ে এবং পাথরের গায়ে দেবতার ছবি খোদাই করে বানানো হয়েছে এই উপাসনালয়টি। এই স্থাপত্য তৈরি করতে যে ব্যাপক লোক বল লেগেছিল তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এই উপাসনালয় তৈরির ক্ষেত্রে যে সবচেয়ে বড় পাথরটি তৈরি হয়েছে সেই পাথরটির ওজন ১৬ টন এবং উচ্চতা ১৮ ফুট লম্বা। ২২ একর জায়গার মধ্যে মোট ২০ টি উপাসনালয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গবেষকদের মত, নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটি মন্দির পুরনো হয়ে গেলে পাশেই তৈরি করা হতো আরও একটি মন্দির। এই উপাসনালয়ের মূল স্তম্ভটি ছিল ইংরাজির T অক্ষরের মতো। এই স্তম্ভের নিচে খোদাই করে অঙ্কিত আছে, বৃশ্চিক, সর্প, সারস, বরাহ, শকুন ও শৃগালের প্রতিকৃতি। হয়তো এই সময় মানুষের এই জীবজন্তুগুলির প্রতি কোন রকম বিশ্বাস ছিল। গবেষকদের মতে এই পশুগুলি আসলে আত্মা ও পারলৌকিক জগতের প্রতীক। তবে অদক্ষ হাতে নির্মিত এই উপাসনালয়ের পতন হয়ে ১০,২০০ বছর আগে কোন এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে। কিছু বছর আগেও মনে করা হত, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও তার ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ভয়ে পেয়ে মানুষের মনে ধর্মের বা অলৌকিক শক্তি সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গোবেকলে তেপে-র উপাসনালয় দেখলে মনে হবে মানুষ জীবজন্তুকেই প্রথম পারলৌকিক শক্তির দূত মনে করে পুজো পাঠ করতে শুরু করেছিল।