ওয়েব ডেস্ক: নক্ষত্র পৃথিবীর থেকে হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করে। আকাশের বুকে মিট মিট করে জ্বলতে থাকে। আমাদের ধরা ছোঁয়া এমনকি দৃষ্টিরও আড়ালে থাকে তাদের প্রকাশ এবং অবস্থান। মানুষের জীবনও যেন সেরকমই। সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে শুরু করলেই ক্রমশ হারিয়ে ফেলতে থাকে ফেলে আসা দিন ও স্মৃতিকে। সফল ব্যক্তিত্বে জীবনী কিন্তু তার ফেলে আসা দিনের সেই লড়াইকে সঙ্গী করে নিয়ে ইতিহাস রচনা করে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী নিয়ে ইতিমধ্যে বলিউডে তৈরি হয়ে গেছে হিট ছবি ‘এম.এস ধোনি’। তাঁর হাজার হাজার অনুরাগীরা দেখেছেন তাঁর জীবনের উত্থান পতনের কঠিন লড়াইকে। কিন্তু সেই লড়ায়ের সময় তাঁর সাফল্যের যুদ্ধে ঢাল তলোয়ার হয়ে যারা পাশে থেকে ছিল তাদের কথা কেই বা ভাবে। এমনই এক অভাগিনী বৃদ্ধার কথা উঠে এলো। ধোনির জীবনীর কোন অংশে একটা নাম হিসাবেও সে কোন দিন স্থান পাবে কিনা সন্দেহ। কিন্তু খড়গপুরে টিকিটবাবুর অধ্যায় কিন্তু ধোনির জীবন থেকে মুছে যাবে না।
তখন সে ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন নয়, বরং ভারতীয় রেলের মাইনে করা টিকিট পরীক্ষক। প্রতিদিনের ৮ থেকে ১০ ঘন্টা চাকুরির জীবনে হয়তো আমার আপনার টিকিটও পরীক্ষা করেছিল ছেলেটি। ৬ ফুট বাই ৮ ফুটের ঘুপচি ঘরে দিন কাটতো সামান্য জীবন যাপন করে। পাশের ঘরের সারাদিন খেটে আসা ছেলেটার মুখে কলাবতী দেবী তুলে ধরতেন গ্রাসটুকু। ভালোবেসে ছেলেটি মা বলে ডাকতেন কলাবতী দেবীকে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে খড়গপুরের টিকিটবাবু দাপিয়ে শাসন করেছে ২২ গজের পৃথিবীকে। বিশ্ব জয়ী মহেন্দ্র সিং ধোনি হয়েছেন তিনি। কিন্তু আশি উর্ধ্ব ক্ষীণ দৃষ্টি শক্তির কলাবতী দেবী সে সব কিছুই দেখার সুযোগ পাননি। মায়ের কাছে ছেলে এখনো আটকে আছে খড়গপুরের টিকিট পরীক্ষক হয়ে। জীর্ণ কুটিরে আধ পেটা খেয়ে এখনো পথ চেয়ে থাকেন কলাবতী দেবী। যদি একবার এসে মা বলে ডাকেন ধোনি। সাফল্যের চাপে, ক্যামেরার ফ্ল্যাসের ঝলকে ধোনি ভুলেছেন তাঁকে। প্রতিবেশীদের দয়ায় কোন রকমে বেঁচে আছেন তিনি। ভাঙাচোরা, নোংরা ঘরে লোটা-কম্বল নিয়ে নিঃসন্তান কলাবতী দেবীর মনে এখনও ধোনির স্মৃতি উজ্বল। প্রতিবেশীরা সকলেই চান একবারের জন্য রূপকথার কাহিনী সফল হোক। ক্রিকেটের মহাকাশের উজ্বল নক্ষত্র মহেন্দ্র সিং ধোনি ফিরে আসুক এই জীর্ণ কুটীরে। অবসান হোক প্রতীক্ষার। ছেলেকে দেখে স্বজনহীনা এই বৃদ্ধার মুখে ফুটুর স্বস্তির হাসি।