Date : 2024-04-19

আঙুলের মিহিন সেলাই, ভুল বানানেও লিখো প্রিয়… একটা চিঠি দিও

ওয়েব ডেস্ক: রবীন্দ্রনাথ তাঁর বালিকা বন্ধু রানুকে লিখেছিলেন, “মনে করছিলুম কাল তোমার চিঠি পাব। কালই পাওয়া উচিত ছিল। পোষ্ট অফিসে কালই নিশ্চয় এসেছিল, কিন্তু পোষ্টমাষ্টারের অসুখ করচে বলে পশ্চিমের ডাক কাল আমাদের দেয়নি, আজ সকালে দিয়ে গেছে….।”
এমন অপেক্ষা আজ আর করতে হয় না। হোয়াটস্যাপের সাদা টিক নীল হতে যতক্ষন। বাড়ির লেটারবক্সে এখন আর চিঠি আসে না। মাঝে মধ্যে জমা হয় ইলেক্ট্রিক বিল,ফোনের বিল বা ক্রেডিট কার্ডের বিল। চিঠি লেখার অভ্যেসটাই যে হারিয়ে গেছে বুঝতে পেরে ২০১৩ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় ১৬৩ বছরের প্রাচীন টেলিগ্রাম পরিষেবা। লাল রঙের, গোল মাথাওয়ালা ছোট থামের মতো সেই ডাক বাক্সটা শহরের অলি-গলি থেকে এক্কেবারে ভ্যানিশ হয়ে গেছে।

কিন্তু জানেন কি? এই ডাক বাক্স দেখতেই কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন সমুদ্রের গভীরে। এমনই এক ডাক বাক্সের হদিশ মিলেছে জাপানের সুসামি শহরে। ‘ডিপ সি ডাইভিং’-এর টানেই প্রতি বছর কয়েকশো পর্যটক ছুটে আসেন এখানে। জাপানের এই শহর মূলত মৎস্যজীবীদের দখলে। প্রায় পাঁচ হাজার মৎস্যজীবী এখানে বসবাস করেন। ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে এখানে ‘কুমানোকোদো’ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যটন প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখনই গড়ে তোলা হয় এই পরিকাঠামো। সমুদ্র সৈকত থেকে ১০ মিটার দূরে এবং ৩২ ফুট গভীরে বসানো হয় ডাক বাক্সটি। ১৯৯৯ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৬ হাজার চিঠি পড়েছে এই ডাক বাক্সে।

কিন্তু জলের তলায় চিঠিগুলো থাকে কিভাবে? এমনটাই ভাবছেন তো? এর জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। স্থানীয় দোকানেই পাওয়া যায় বিশেষ ওয়াটারপ্রুফ কাগজ, খাম আর বিশেষ মার্কার পেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয় চিঠিগুলিকে। ২০০২ সালে ‘ডিপেস্ট আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’ হিসেবে গিনেস রেকর্ডের বইয়ে স্থান পায় সুসামির এই ডাক বাক্সটি। তবে সুসামির এই ডাক বাক্সটিই বিশ্বের একমাত্র ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’ এমন ভাববেন না। প্রশান্ত মহাসাগরের ভানুয়াতো দ্বীপরাষ্ট্রে পর্যটক টানতে প্রথম শুরু হয়েছিল এই আন্ডারওয়াটার পোস্ট বক্স। তারই অনুকরণে জাপানের সুসামিতে তৈরি হয় এই ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’।