কলকাতা: বছর ঘুরে নিয়ম মেনে ফিরে আসে বসন্ত। শব্দ আর বায়ু দূষণের দাপটে ‘সিটি অফ জয়’-এ বসন্তের অনুভুতি আটকে গেছে কংক্রিটের জঙ্গলে। সন্ধ্যের নিভে আসা আলোয় কাছে ঘেঁষে বসে থাকা যুগল ছায়ামূর্তিকে একটু প্রশয়ের হাসি উপহার দেবে সবাই। কারণ নিয়ম মেনে যে’বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। বেশ কয়েক বছর ধরেই বাঙালির মধ্যে প্রচলিত হয়েছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা প্রেম দিবস উজ্জাপনের চিন্তাধারা। পয়লা ফাল্গুন বা ১৪ই ফেব্রুয়ারি প্রেম দিবস উজ্জাপনের হিড়িকে জমে ওঠে ফুলের বাজার , টুকিটাকি রকমারি জিনিস পত্রের বিকিকিনি। যদিও প্রেম কোন তারিখ সময় মেনে হয় না। অনুভুতিকে তবুও ঘড়ির কাঁটার ২৪ টা ঘন্টায় বেঁধে ফেলেছেন বর্তমান প্রেমিক যুগল। সকাল সকাল কেউ হয়তো শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের দুটো লাইন হোয়াটস অ্যাপে সেন্ড করে ঘুম ভাঙিয়েছেন সঙ্গীর।
ব্যস্ত সময়ের মধ্যে থেকে কয়েকটা রঙিন মুহুর্ত কাটাতে শহরের পার্কে পার্কে পৌঁছে গেছেন প্রেমিক যুগল। সন্ধ্যে হয়ে আসার আগে সেখানেই চুম্বনের উষ্ণতায় মজবে প্রেম। ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে সবচেয়ে বেশি উন্মাদনা দেখা যায় স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের মধ্যে। শহরে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে সবচেয়ে বেশি চাহিদা টুকটুকে লাল গোলাপের তাদের মধ্যেই। যদিও গোলাপের দাম আকাশ ছুঁয়েছে প্রেম দিবসে। শহর থেকে জেলা প্রতি পিস্ গোলাপ এদিন ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রেম যা মানেনা কোন বাধ্যবাধকতা, মানেনা অভাব, প্রাচুর্য্য। ভালোবাসার দিনে দাম দিয়ে কেনা গাছের গোলাপ না হোক মনের গোলাপ দিয়েও জয় করা যায় ভালোবাসার মানুষকে। শুধু ভ্যালেনন্টাইন্স ডে নয়, সরস্বতী পুজো থেকেই বাঙালির ‘লাভ ইস ইন দি এয়ার’। তাই গোলাপ ফুলের চাহিদা এক সপ্তাহ ধরেই তুঙ্গে ছিল। ফুলই নয় প্রিয় সঙ্গীনিটিকে ভালোবেসে দেওয়া উপহারের তালিকায় রয়েছে টেডিবিয়ার, চকোলেট। পকেটমানির চাপেও ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে ফারের টেডিবিয়ার আর চকোলেটের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। নিভৃতে সময় কাটাতে শহরের বিনোদন পার্ক গুলিতে সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ছিল। খাতায় কলমে শীত বিদায় নিলেও উত্তুরে হাওয়ার ফেলে যাওয়া স্পর্শে এখনো বাতাসে হিমেল পরশ রয়েছে। তাই আবহাওয়া পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে খোলা মেলা পোশাকের বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। পার্কে খোলা আকাশের নিচেই শুধু নয়, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে সঙ্গীকে নিয়ে রূপোলী পর্দায় নতুন সিনেমা দেখার আসা সবারই থাকে। এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তেও তার অন্যথা হবে না। শহর থেকে জেলা মাল্টিপ্লেক্সে থেকে সাধারন সিনেমা হল, ময়দানের বাদামভাজা থেকে ককটেল, হুক্কাবার এক কথায় বলা যায় ‘ফুল ফুটুক বা না ফুটুক আজ বসন্ত’।