ওয়েব ডেস্ক : দরজায় কড়া নাড়ছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। একদিকে প্রার্থী-প্রচার অন্যদিকে আক্রমন-পাল্টা আক্রমনে সরগরম দেশ-রাজ্য-রাজনীতি। সব মিলিয়ে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবে সামিল হতে তৈরী দেশবাসী। রাজনীতির উত্তাপে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। রাজ্যের ৪২ টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। একেবারে আদাজল খেয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। কারও হাতিয়ার পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ান কারও আবার ঢালাও প্রতিশ্রুতি। ভোটের উত্তাপ ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে মহানগর থেকে জেলায়। কি ভাবছে জেলা? বিগত পাঁচ বছরে কতটা প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে? আগামী দিনে ক্ষমতায় নতুন সরকার এলে তার কাছেই বা প্রত্যাশা কী? মানুষের খবর নিতে আরপ্লাস নিউজ পৌঁছে গেছে একেবারে গ্রাউন্ড জিরোয়। আজ নজরে হুগলী লোকসভা কেন্দ্র।
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত বর্ধমান বিভাগের একটি জেলা হুগলী। হুগলী নদীর নাম থেকেই জেলার এই নামকরণ। জেলা সদর চুঁচুড়া-তে। জেলাটির চারটি মহকুমা: চুঁচুড়া সদর, চন্দননগর, শ্রীরামপুর, ও আরামবাগ। ১৭৯৫ সালে ইংরেজরা বর্ধমানের দক্ষিণাংশকে বিচ্ছিন্ন করে প্রশাসনিক কারণে হুগলি জেলা তৈরি করে। হাওড়া তখনও হুগলী জেলার অংশ ছিল। তখন অবশ্য জেলা বলতে ছিল কতগুলি থানার সমষ্ঠি। পর্তুগিজ, ডাচ ও ব্রিটিশদের উপনিবেশের একাধিক স্মৃতি বুকে নিয়ে হুগলি আজ পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের মানচিত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা।
রাজনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হুগলী লোকসভা কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরে চুঁচুড়া থেকে চন্দননগরের বিভিন্ন জায়গায় উড়েছে বামেদের লাল পতাকা। ১৯৫৭ থেকে ২০০৪ বামেদের একছত্র আধিপত্যে ছেদ পড়ে মাত্র একবার। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের আগে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের কারখানা বন্ধের ঘটনা বড়সড় প্রভাব ফেলে বামেদের ভোট ব্যাঙ্কে। বামেদের ঐ আসন ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত সচেতন এই হুগলীর শেষ সাধারণ নির্বাচনে সামিল হন প্রায় ৮৩% ভোটার। ২০১৯ এও কী জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে তৃণমূল নাকি ফের একবার পালাবদল হতে চলেছে, জনসাধারণের মন বুঝতে সরেজমিনে আরপ্লাস নিউজ।
হুগলী লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী
তৃণমূল– ডক্টর রত্না দে নাগ
বিজেপি– লকেট চট্টোপাধ্যায়
বামপ্রার্থী– প্রদীপ সাহা
কর্মসংস্থান থেকে ক্রমাগত বেড়ে চলা অপরাধ, নারী নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলি এবার হুগলীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে চলেছে। হুগলীর প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। সিঙ্গুরে কৃষি না শিল্প সেই প্রশ্নই পাল্টে দেয় পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত। এবছর হুগলী আলুর ফলন ভালো হলেও দাম পাচ্ছেন না চাষীরা। সেখানকার কৃষিজীবী মানুষের বক্তব্য, সঠিক দাম না পেলে গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
তৃণমূল সরকারের আমলে হুগলী পেয়েছে সিঙ্গুর গভর্মেন্ট কলেজ,কন্যাশ্রী সহ নানা প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা। রাস্তা , লাইট ,পানীয় জলের সমস্যা মিটলেও কর্মসংস্থানের দিক থেকে রাজ্যের অন্যান্য অংশের চেয়ে আলাদা নয় এখানকার চিত্রটা। এই অবস্থায় হুগলীর মানুষ কাকে বেছে নেবেন? কী মনে করছেন প্রার্থীরা? জানালেন আরপ্লাস নিউজের মুখোমুখি হয়ে…
বামেদের শক্ত ঘাঁটিতে প্রথম বার জোড়াফুল ফোটে ২০০৯ সালে। সৌজন্যে তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী ডক্টর রত্না দে নাগ। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে জয় নিয়ে তিনি ২০০ শতাংশ আশাবাদী। তিনি বলেন,“আমি সারাবছর মানুষের পাশে থাকি । তাই মানুষ আমার পাশে আছে।” মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সরকারের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইউনেসকো গিয়ে পুরস্কার নিয়ে আসতে পারেননি। পাশাপাশি হুগলী জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তপন দাশগুপ্তের কথায়, হুগলী জেলাতে তারা কোনো লড়াই মনে করছেন না। শুধুমাত্র জয় নয় বড় মার্জিনে জয় লাভ করবেন হুগলীর তিন কেন্দ্রের প্রার্থীরা সে বিষয়ে নিশ্চিত তিনি।
অন্যদিকে বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের প্রচার চলছে পুরোদমে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ বাড়াচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য,“সিঙ্গুরের জন্য গত সাত বছরে কিছু হয়নি। এটা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই না,সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, উন্নয়নের নামে যে সন্ত্রাস চলছে তার বিরুদ্ধে লড়াই। “ তিনি নিশ্চিত এবার হুগলীর মানুষ বিজেপিকেই বেছে নেবে।
তৃণমূল ও বিজেপির বিপরীতে সিপিএমের প্রদীপ সাহা। ফের কী হুগলীতে লাল ঝড় উঠবে? প্রত্যয়ী প্রদীপের উত্তর, “দু-হাত তুলে মানুষ সমর্থন করছেন।” জয় নিয়ে নিশ্চিত প্রদীপ সাহা।
সবমিলিয়ে ভোটের ব্যারোমিটারে পারদ চড়ছে। জোড়া ফুল, পদ্মফুল নাকি লাল ঝড়? উত্তর রয়েছে হুগলী জেলার মানুষের কাছেই। তবে হুগলীর রাজনৈতিক হাওয়া লকেট চট্টোপাধ্যায় ও প্রদীপ সাহার চেয়ে ডক্টর রত্না দে নাগকেই এদিয়ে রাখছেন।