ওয়েব ডেস্ক: জঙ্গলমহলের বুক চিড়ে এখন ঝাঁ চকচকে পিচের রাস্তা। শাল-মহুলের দেশে নেই ভারী বুটের আওয়াজ, নেই বারুদের গন্ধ, ব্যক্তি হত্যার রাজনীতি। প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছেছে বিদ্যুৎ। সদর শহরে রয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু রুখা-শুখা সাঁওতাল পরগনার মানুষের কাছে আজও অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সংকুলান কি যথেষ্ট? ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়ায় কি এক্স ফ্যক্টর হতে চলেছে এই প্রশ্নই? প্রশ্ন যাই থাক ভোটযুদ্ধের আসরে এখানেও কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। এদিকে মানুষের খবর নিতে আরপ্লাস নিউজ পৌঁছে গেছে একেবারে গ্রাউন্ড জিরোয়। আজ নজরে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র।
সুদীর্ঘ বাংলা ভাষা আন্দোলনের শেষে ১৯৫৬ সালে ভারত সরকার মানভূম জেলা ভেঙে একটি নতুন জেলা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সংযুক্ত করতে বাধ্য হয়। জন্ম হয় পুরুলিয়ার। লড়াই সেখানেও থামেনি। দীর্ঘ দিনের পিছিয়ে পড়া জেলার তকমার সঙ্গে কিছু বছর আগে জুড়ে যায় মাওবাদের কলঙ্ক। ছৌ, টুসু-ভাদু’র লালমাটির দেশে সে যেন এক নতুন বিড়ম্বনা। সেখান থেকে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। বর্তমানে দিনকয়েকের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার অন্যতম ডেস্টিনেশন পুরুলিয়া। ডুয়ার্স বা ভুটান লাগোয়া দার্জিলিং-এর জলঢাকার সঙ্গে এখন অনায়াস প্রতিযোগিতা চলে অযোধ্যা বা গড়পঞ্চকোটের।
বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, মানবাজার, জয়পুর, পুরুলিয়া সহ একাধিক এলাকা নিয়ে পুরুলিয়া লোকসভা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যার বিশেষ রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ৩৪ বছরের বাম আমলে পুরুলিয়া ছিল বামেদের শক্ত ঘাঁটি। ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে ছিল বামেদের একছত্র আধিপত্য। সময় বদলেছে। ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। বর্তমানে সেখানকার তৃণমূল সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ভোটের উত্তাপ মাপতে আর প্লাস নিউজ পৌঁছে গিয়েছিল পুরুলিয়ায়। কী ভাবছেন সেখানকার মানুষ?
গতবার যে প্রত্যাশার কাঁধে ভর দিয়ে ভোট দিয়েছিলেন, তা কী পূরণ হয়েছে? অনেকের মতে আগের চেয়ে বেশ কিছু সমস্যা মিটেছে। রাস্তাঘাট, জল, ঘরবাড়ির সমস্যা কিছুটা মিটলেও সে চিত্র সার্বিক নয়। ইটভাটার এক দিনমজুরের কথায়, “প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, কবে হবে তাও জানিনা”। সেখান থেকেই এবছর ভোট বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ভোটবাজারে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে পুরুলিয়ায় চতুর্মুখী লড়াইয়ের প্রবল সম্ভাবনা কথা। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে ঘাসফুল বনাম পদ্মফুলের। এবার পুরুলিয়ায় মুখোমুখি চার হেভিওয়েট প্রার্থী।
তৃণমূলের মৃগাঙ্ক মাহাতো, বিজেপির বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী, কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো এবং বাম সমর্থিত ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী বীর সিংহ মাহাতো।
এবারের নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন তাঁরা? প্রচারে তাঁদের এক্স ফ্যাক্টরই বা কী? জানালেন আর প্লাস নিউজের মুখোমুখি হয়ে…
পেশায় চিকিৎসক তথা এলাকার অন্যতম পরিচিত মুখ ডাঃ মৃগাঙ্ক মাহাতো। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমুল-কংগ্রেস প্রার্থী। তাঁর মতে এবারের লড়াই আত্মসম্মানের লড়াই। মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ , ইউনিভার্সিটির পাশাপাশি মমতা-সরকারের ৪৭ টি প্রকল্পের নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে জেলাবাসী। তাঁর মতে জেলার উন্নতি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। তাই ৪২ এ ৪২ এবং রাজ্য ছাড়িয়ে এবার যে তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গন্তব্য দিল্লি, সেবিষয়ে একশ শতাংশ নিশ্চিত তিনি। পাশাপাশি জয় নিয়ে নিশ্চিত পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের ভারপ্রাপ্তমন্ত্রী তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শান্তিরাম মাহাত।
মৃগাঙ্কের বিপরীতে কংগ্রেসের প্রার্থী ও এলাকার বিধায়ক নেপাল মাহাত। তাঁর মতে সেখানকার কৃষকদের চাষাবাদের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা সেচ ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ ছিলেন দেবেন মাহাত। তাঁর আমলে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করা গেলেও, ক্ষমতা হস্তান্তরের পর সমস্যা সেই তিমিরেই থেকে যায়। লোকসভা নির্বাচনে জয় নিয়ে নিশ্চিত নেপাল মাহাত। জয়ী হয়ে চান, সংসদে এই সমস্যার কথা তুলে ধরতে।
অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী মনে করেন, লড়াই চতুর্মুখী হলেও জয় তাদের দখলেই থাকবে। এমনকি বেশ বড় ব্যাবধানে জয় সম্পর্কে আশাবাদী তিনি।
পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র ছিল একসময় বামেদের শক্ত ঘাঁটি। ক্ষমতা বর্তমানে তৃণমূলের দখলে গেলেও জয় সম্পর্কে নিশ্চিত ৫ বারের জয়ী বাম সমর্থিত ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী বীর সিংহ মাহাতো। তিনি বলেন দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, বিচারবিভাগ আজ বিপন্ন। বর্তমান সরকারকে সরানোর জন্যই এই লড়াই।
সবমিলিয়ে ভোট যুদ্ধে তপ্ত পুরুলিয়া। তবে বিরোধী দলগুলির তোড়জোড় যেমনই থাক, ভোটের অঙ্কে পালাবদলের ইঙ্গিত কি আদৌও স্পষ্ট? তা জানেন একমাত্র পুরুলিয়ার ভূমিপুত্ররাই …