ওয়েব ডেস্ক: নির্ঘন্ট মেনে মঙ্গলবার চৈত্রমাসের ‘পাপমোচনী’ একাদশী। প্রাচীনকাল থেকে একাদশী তিথি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা প্রকাশ করে এসেছে হিন্দু সমাজ। কঠোর সংযমের যত ব্রত উপাচার আছে চাপিয়ে দেওয়া হত বিধবাদের উপর। একাদশী ব্রত মানেই বিধবাদের ব্রত এই ধারণা যে ভুল তা অনেকেই হয়তো এখনও জানেন না।
ক্যালেন্ডার মেনে প্রতি মাসে দুটো একাদশী তিথি থাকে, প্রতিটি একাদশী তিথির নির্দিষ্ট নাম রয়েছে। এক একটি একাদশী তিথির ব্রতের সঙ্গে জড়িত আছে এক একটি পৌরাণিক কাহিনী। চৈত্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিকে বলে পাপমোচনা একাদশী। এই একাদশী তিথির সঙ্গে জড়িত আছে মহাভারতের কাহিনী। একবার পান্ডব জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে একাদশী মাহাত্ম্য শোনাতে অনুরোধ করেন।
শ্রীকৃষ্ণ তখন যুধিষ্ঠিরকে বলেন, “ধর্মরাজের পুত্র হয়ে আপনি ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করছেন? চৈত্রমাসের এই একাদশী তিথি ‘পাপমোচনী’ একদশী নামে প্রসিদ্ধ।” শ্রীকৃষ্ণ এই প্রসঙ্গে যুধিষ্ঠিরকে রাজা মান্ধাতাকে বলা লোমেশ মুনির বিচিত্র উপাখ্যানটি শোনান। ‘চৈত্ররথ’ নামক এক পুষ্প উদ্যানে বেশ কয়েকজন মুনি বহুদিন ধরে তপস্যায় মগ্ন ছিলেন। সেখানেই মেধাবী নামে এক যুবক তপস্যী ধ্যানে মগ্ন ছিলেন।
মঞ্জুঘোষা নামে এক অপ্সরার তাঁর প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। অভিশাপের কারণে মঞ্জুঘোষ নামে সেই অপ্সরা আশ্রমের থেকে দুই মাইল দুরে থাকতেন। দুরত্বও তাঁর আকর্ষণকে কিছুমাত্র কমাতে পাড়েনি। ছলে বলে সে মেধাবী নামের সেই তপস্যীকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে লাগলেন। মেধাবীও ক্রমশ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজ ইষ্টকে বিসর্জন দিয়ে অপ্সরার প্রতি কামাশক্ত হয়ে জীবন কাটাতে লাগলেন। অপ্সরা মেধাবীর কাছে অভিশাপের ভয় বিসর্জন দিয়েই সন্ধ্যাকালে এসে পৌঁছালেন এবং প্রাতঃকাল পর্যন্ত আশ্রম কুটির থেকে বের হলেন না।
অভিশাপের ভয় সেখানেই লুকিয়ে থাকলেন অপ্সরা। এমন ভাবে মুনি দীর্ঘ ৫৬ বছর সেই অপ্সরার সঙ্গে কাটানোর পরেও তাঁর সেই সময়কালকে অর্ধরাত্রী মনে হতে লাগল। উপায় না দেখে অপ্সরাই মুনিকে স্মরণ করালো যে জীবনের অর্ধেক সময় সে অতিবাহিত করেছে শুধুমাত্র নারী সঙ্গ করেই। মুনি তখন মঞ্জুঘোষার প্রতি প্রবল ক্ষোভে তাকে অভিশাপ দিল পিশাচী হওয়ার। মুনির অভিশাপে সমস্ত রূপ হারালেন মঞ্জুঘোষা। অপ্সরা মুনির কাছে ক্ষমা চেয়ে পাপমোচনের উপায় প্রার্থনা করলেন।
মেধাবী মুনি মঞ্জুঘোষাকে চৈত্রমাসে ‘পাপমোচনী’ একাদশী পালনের আদেশ দিলেন। মুনির আদেশে এই বর্ত পালন করে অপ্সরা পিশাচত্ব থেকে মুক্ত হলেন। এমনকি মেধাবী মুনি তাঁর পিতা চ্যবনের আদেশে নিজেও ‘পাপমোচনী’ একাদশী পালন করে পুনঃরায় নিজের ইষ্ট-অভিষ্ট লাভ করলেন। শ্রীকৃষ্ণের কথা এই ব্রত পালন করেছিলেন পঞ্চপান্ডব, এবং মনের পাপবোধকে বিসর্জন দিতে সক্ষম হয়েছিলেন